বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বগুড়া: শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় প্রাচীন ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক অমূল্য ধন। প্রাচীন পুন্ড্রনগরীতে প্রায় ৪০০০ বছর পুরনো স্থাপনা সমৃদ্ধ এ নগরী মাউর্যা ও গুপ্ত রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে পাল রাজারা পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়কে মূল রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন। দর্শনার্থীরা বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থানরত ধ্বংসাবশেষগুলো পরিদর্শন করতে পারেন।
বরেন্দ্র অঞ্চলের (রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, মালদাহ, রাজশাহী) মানুষ পুন্ড্রদের আদি বসবাসকারী। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৬৯৩ সালে বিখ্যাত চীনা ভ্রমণকারী ওয়ান চুন বৌদ্ধ স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য পুন্ড্রনগরী তথা মহাস্থানগড় আসেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, ছয় মাইল আয়তনের পুন্ড্রনগরী তখন একটি সমৃদ্ধ জনপদ, যা ব্যাবলোন, এথেন্স ও মিশরের কাঠামোর সঙ্গে তুলনীয় ছিল। মুসলিম শাসনামলে ধীরে ধীরে পুন্ড্রনগরী মহাস্থানগড়ে পরিণত হয়।
১৮০৮ সালে “বুচানন হামিল্টন” প্রথম মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে এটিকে প্রাচীন পুন্ড্রনগরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মহাস্থানগড়ের দর্শণীয় স্থানসমূহ
মহাস্থানগড়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- বৈরাগীর ভিটা: দুটি মন্দিরের অবশিষ্টাংশ
- খোদারাপাথার ভিটা, কালীদহ সাগর ও পদ্মাদেবীর বাসভবন
- শীলাদেবীর ঘাট, জিউৎকুন্ড কুপ
- মানকালির দ্বীপে ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের ধ্বংসাবশেষ
- গোবিন্দ ভিটা, তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ, গোকুল মেধ (বেহুলার বাসর ঘর বা লক্ষিন্দরের মেধ)
- ইস্কান্দারের ধাপ, খুল্লানার ধাপ, মাহী সওয়ার মাজার শরীফ, ভীমের জঙ্গল, জগির ভবন, অররা, তেঘর, রোজাকপুর, মাথুরা
- মহাস্থানগড় জাদুঘর ও পরশুরামের প্রাসাদ
কিভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে বগুড়া:
ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, শ্যামলী, আবদুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর থেকে বগুড়া যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য পরিবহন:
- শ্যামলী পরিবহন (02-900331, 8034275)
- এস আর ট্রাভেলস (8013793, 8019312, 01711-394801)
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ (01713-402671, 01713-402631)
- একতা পরিবহন (01712-287730)
- বাবুল এন্টারপ্রাইজ, এস এ পরিবহন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন
- ট্রেনে ঢাকা থেকে বগুড়া:
- রংপুর এক্সপ্রেস: প্রতিদিন সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে যাত্রা।
- লালমনি এক্সপ্রেস: রাত ১০:১০ মিনিটে ঢাকা থেকে যাত্রা।
- রংপুর এক্সপ্রেস রবিবার, লালমনি এক্সপ্রেস শুক্রবার বন্ধ থাকে।
বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই মহাস্থানগড় যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
বগুড়ায় বিভিন্ন মানের হোটেল ও মোটেল রয়েছে।
ভাল মানের হোটেল ও মোটেল:
পর্যটন মোটেল, নাজ গার্ডেন, নর্থওয়ে মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, মোটেল ক্যাসল এমএইচ, সেঞ্চুরি মোটেল, হোটেল সিস্তা, হোটেল আকবরিয়া, রেডচিলিস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এন্ড আবাসিক হোটেল
সাধারণ মানের হোটেল:
হোটেল আল আমিন, হোটেল রয়াল প্যালেস, হোটেল সান ভিউ, হোটেল রাজমনি, হোটেল হানি ডে, হোটেল আজিজ
মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রাচীন ধ্বংসাবশেষগুলো ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতা ও ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলতে এটি অন্যতম আদর্শ গন্তব্য।
 
            









