বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকান উচ্ছেদ ও এসব দোকানের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈকতের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ লঙ্ঘন করে এসব দোকানের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এদিকে সৈকতের দখল উৎসব ঠেকাতে ৮ সরকারি কর্মকর্তার কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সোমবার ডাকযোগে পাঠানো ওই নোটিশে ২০১১ সালের হাইকোর্ট মামলার (নম্বর ৬২৬/২০১১) রায় বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক।
বেলা জানিয়েছে, ১৯৯৯ সালে সরকার কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকা ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপরও নিয়ম ভঙ্গ করে সৈকতের জোয়ার-ভাটা রেখা থেকে প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোনে’ অবৈধ স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেড় শতাধিক দোকান নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে লাবনী, সুভাজা ও কলাতলী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে প্রায় ২০০টি স্থাপনা দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত থেকে বালিয়াড়িতে দোকান বসানো শুরু হয়। অধিকাংশ দোকান একই আকৃতির এবং এক ধরনের রঙে সাজানো। দোকানদারদের দাবি, তারা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন। তবে অনেক ব্যবসায়ী প্রশ্ন তুলেছেন, বৈধ অনুমতি থাকলে কেন রাতের আঁধারে দোকান বসানো হলো।
সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন বলেন, “একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ দোকান বসাচ্ছে। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত দুই ব্যক্তি জাকির হোসেন ও নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান জানান, দোকান বসানো ব্যক্তিদের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। কোনোভাবেই অবৈধ স্থাপনা টিকে থাকতে দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দোকান বসানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনুমতি থাকলেও পরিবেশ নষ্ট হয় এমন স্থানে দোকান বসানোর সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে এসব দোকান সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
👉 প্রশ্ন হচ্ছে—কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি রক্ষায় সরকারের ঘোষিত পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব কতটা ঠেকানো সম্ভব হবে?