Home অন্যান্য বেহুলা ও লখিন্দর: একটি রূপান্তরিত রূপকথা

বেহুলা ও লখিন্দর: একটি রূপান্তরিত রূপকথা

(একটি লোকজ রূপকথা)

অনেক অনেক দিন আগের কথা। বাংলার একটি রাজ্য চাঁদপুর নগর। সেখানে বাস করতেন এক প্রতাপশালী ব্যবসায়ী চাঁদ সদাগর। তাঁর ছিল অপরিসীম ধনসম্পদ, কিন্তু ঈশ্বরী মনসা দেবীর পূজা না করায় তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল এক অভিশাপ।

চাঁদ সদাগরের একমাত্র পুত্র ছিল লখিন্দর চঞ্চল, সুদর্শন, সাহসী ও স্নেহপরায়ণ। আর আরেক রাজ্যের ছিল এক সুন্দরী, জ্ঞানী, হৃদয়বতী কন্যাবেহুলা। তাদের বিয়ে হয় রাজকীয় আয়োজনে, কিন্তু সেই বিয়েতে লুকিয়ে ছিল মনসা দেবীর প্রতিশোধের বিষ।

বিয়ের রাতেই মনসা দেবীর পাঠানো কালনাগ লখিন্দরকে দংশন করে তাকে ছিনিয়ে নেয় জীবনের আলো থেকে।


🛶 বেহুলার যাত্রা: প্রেমের শক্তি

সেই রাতেই বেহুলা যে ছিল নরম হৃদয়ের এক রাজকন্যা, পরিণত হলো এক যোদ্ধ্রীতে। সে সিদ্ধান্ত নেয় লখিন্দরকে ফেরাবে। সে তৈরি করে একটি পুত্তলি-তোলা নৌকা, লাশের পাশে বসে শুরু করে ভাসানযাত্রা।

নদীর জলে নৌকা বয়ে চলে সঙ্গী একনিষ্ঠতা, সাহস আর প্রেমের শপথ। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, বেহুলা নদী থেকে নদীতে, লোক থেকে দেবলোকে ভেসে চলে। অনাহারে, ক্লান্তিতে, সাপের ভয় আর দেবতার রোষ উপেক্ষা করে সে এগিয়ে চলে।


🔱 দেবতাদের দরবারে এক মানবীর তেজ

শেষে সে পৌঁছে যায় স্বয়ং স্বর্গলোকে। দেবতা ইন্দ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন—এক মানবী কেমন অবিচল! মনসা রুষ্ট হন, বলেন, “এক নারী কীভাবে দেবতার বিপক্ষে দাঁড়ায়?”

বেহুলা জবাব দেয়, “আমি দেবীকে পূজা করিনি ঠিক, তবে ভালোবাসা করেছি সত্য করে। যদি ভালোবাসা মিথ্যা হয়, তবে ফিরবো না স্বর্গ থেকেও।”

মনসা অবশেষে নত হন বেহুলার প্রেম ও সাহসের কাছে। তিনি বলেন, “তুমি ভালোবাসার নতুন ব্যাখ্যা হলে, বেহুলা। তোমার স্বামী ফিরে পাক জীবন, আর তোমার কাহিনি ছড়িয়ে যাক বাংলার ঘরে ঘরে।”


🌼 শেষ দৃশ্য: আলোয় ফিরে আসা

লখিন্দর জেগে ওঠে। চোখ মেলে সে দেখে তার পাশে বসে বেহুলা, ঠিক আগের মতোই, কিন্তু আরও দৃঢ়, আরও আলোতে ভরা।

তারা ফেরে নিজ রাজ্যে। চাঁদ সদাগর মনসার পূজা দেন। বাংলার আকাশে সেই দিন থেকে শোনা যায়ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, তা দেবতাকেও নতজানু করতে পারে।


এই রূপকথা থেকে আমরা যা শিখি:

  • প্রেম শুধু হৃদয়ের নয়, সে জীবনের জন্য লড়াইও করে
  • এক নারীর সাহস ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে