Home Second Lead যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কিনছে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বাড়তি শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নেওয়া হয়েছে এই কৌশল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

রবিবার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বোয়িংয়ের ব্যবসাটা কিন্তু সেদেশের সরকার করে না, কোম্পানি করে। আমরা তাদের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনতে অর্ডার দিয়েছি।”

সচিব জানান, এর আগে বাংলাদেশের অর্ডার ছিল ১৪টি বোয়িং উড়োজাহাজ। তবে বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সেটি বাড়িয়ে ২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যেমন ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া প্রত্যেকেই ১০০টি করে বোয়িং কিনছে। আমরাও চেষ্টা করছি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক ভারসাম্য বজায় রাখতে।”

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কর্তৃপক্ষ আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ সরকার ইউএসটিআরের কাছে তাদের লিখিত অবস্থানপত্র জমা দেয়।

সচিব বলেন, “আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসটিআরের অফিসে আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক হবে। আমি নিজেও যাচ্ছি। সেই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন এবং উপপ্রধান উপদেষ্টা খলিলুর রহমান অংশ নেবেন।”

এ সময় সচিব আরও জানান, তুলা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রেও সমঝোতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন বছর আগেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত, যা এখন অনেকটাই কমে গেছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে আগ্রহী সরকার।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং কেনার এ উদ্যোগ কেবলমাত্র পরিবহন খাতের সম্প্রসারণ নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে এক কৌশলগত বাণিজ্যনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিখাত—তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য এবং কৃষিপণ্য—এর ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বাংলাদেশ তাদের বাজারে প্রবেশাধিকার পেলেও পারস্পরিক বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। ফলে ওয়াশিংটন প্রশাসন চায়, বাংলাদেশ যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও পণ্য ও সেবা কিনে দ্বিপাক্ষিক ঘাটতি কমায়।

এই প্রেক্ষাপটে বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। একদিকে, এটি বোয়িংয়ের মতো মার্কিন কোম্পানিকে আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে, অন্যদিকে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মনোভাব নরম করতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত ‘ট্রেড-অফ ডিপ্লোম্যাসি’  যেখানে কূটনৈতিক সমঝোতার বিনিময়ে অর্থনৈতিক চুক্তি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট: তৈরি পোশাক শিল্পের মতো শ্রমঘন খাতের ওপর শুল্ক বাড়ালে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে এবং রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে। শুল্ক আরোপের এই হুমকি কার্যকর হলে ইউরোপ ও কানাডা নির্ভরশীলতা বাড়বে, যা বৈচিত্র্যহীন বিপণনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

তাই বোয়িং কেনার মতো বড় অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বার্তা দিচ্ছে— ‘আমরা আপনার বাজারে ব্যালান্স আনছি, আপনি আমাদের বাজারে বাধা সৃষ্টি করবেন না।’ এই পরিপ্রেক্ষিতে বোয়িং চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক লেনদেন নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা, যা বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য নেওয়া হয়েছে।

সচিবের ভাষায়, “বোয়িং কোম্পানি তাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিমানগুলো সরবরাহ করবে। এজন্য দুই বছরের মতো সময় লাগবে।”