বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বুধবারের বড় ধসের পর বৃহস্পতিবার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও উদ্বেগ কাটেনি। সৌদি আরবের সম্ভাব্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকোচন এই পরিস্থিতির মূল চালক হিসেবে উঠে আসছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭:৩০ জিএমটি-তে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি দাঁড়ায় ৬১ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৬ সেন্ট বা ০.১ শতাংশ কম। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম নামে ৫৮.০৯ ডলার, অর্থাৎ ১২ সেন্ট বা ০.২ শতাংশ কমেছে। বুধবারের দরপতনের ফলে WTI-এর মূল্য ২০২১ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নয়া দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান SS WealthStreet-এর প্রতিষ্ঠাতা সুগন্ধা সচদেবা বলেন, “স্বল্পমেয়াদে বাজারের দিকটি এখনও নিম্নমুখী। চাহিদা হ্রাস এবং সরবরাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনার মিলিত প্রভাবে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৫ ডলারে নেমে আসার ঝুঁকি রয়েছে।”
বার্তা সংস্থাকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব ওপেক+ মিত্রদের স্পষ্ট করেছে যে তারা আর বাজারকে কৃত্রিমভাবে সহায়তা করতে আগ্রহী নয় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কম দামে তেল বিক্রি করে উৎপাদন অব্যাহত রাখার সক্ষমতা রাখে।
এদিকে, আগামী ৫ মে ওপেক+ জোটের আট সদস্যদেশ বৈঠকে বসবে, যেখানে জুন মাসের উৎপাদন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। টানা দ্বিতীয় মাসের মতো তেল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠতে পারে এই বৈঠকে। সচদেবা সতর্ক করে বলেছেন, “উৎপাদন সংক্রান্ত যেকোনো অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত বাজারে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।”
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি এবং আগত বাণিজ্য বিধিনিষেধের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, যার ফলে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে আগ্রাসী নীতি নিচ্ছেন, বিশেষ করে চীনসহ প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।
রয়টার্স পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, এই বাণিজ্য উত্তেজনা ও চাহিদা সংকোচনের যুগল ফল হিসেবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম চলতি বছর আরও নেমে যেতে পারে।
বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ভারতের দুর্বল চাহিদার কারণে ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী তেলের দৈনিক চাহিদা বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে ৬.৪ লাখ ব্যারেলে, যা আগে ছিল ৮ লাখ ব্যারেল।
এক জরিপে দেখা যায়, ৪০ জন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকের মতে ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়াবে ৬৮.৯৮ ডলার/ব্যারেল, যা মার্চের পূর্বাভাস (৭২.৯৪ ডলার) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। একইভাবে, WTI তেলের গড় দাম ৬৫.০৮ ডলার/ব্যারেল হতে পারে, যা আগের পূর্বাভাস ছিল ৬৯.১৬ ডলার।