Home আইন-আদালত লন্ডনে ২৬ বার ছুরিকাঘাতে স্ত্রী হত্যা: বাংলাদেশির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

লন্ডনে ২৬ বার ছুরিকাঘাতে স্ত্রী হত্যা: বাংলাদেশির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হাবিবুর রহমান মাসুম
আজহার মুনিম, লন্ডন: ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড শহরে প্রকাশ্যে নিজের স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার দায়ে বাংলাদেশি নাগরিক হাবিবুর রহমান মাসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। গত মঙ্গলবার ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট এ রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয় যে মাসুমকে কমপক্ষে ২৮ বছর কারাগারে থাকতে হবে।

২০২৪ সালের ৬ এপ্রিলের এক বিভীষিকাময় দিনে ব্র্যাডফোর্ড শহরের রাস্তায় নিজের স্ত্রী

কুলসুমা আক্তার

কে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন হাবিবুর রহমান মাসুম। এ সময় তাদের শিশু সন্তান ছিল একটি প্র্যামে, এবং কুলসুমার সঙ্গে ছিলেন তার এক নারী বন্ধু। ঘটনাটি ঘটে শত শত পথচারীর সামনেই।

পূর্বে ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব বেডফোর্ডশায়ারে পড়াশোনা শেষ করে মাসুম যুক্তরাজ্যে গ্র্যাজুয়েট ভিসায় বসবাস করছিলেন। তার বাসস্থান ছিল বার্নলির লিমিংটন অ্যাভিনিউ এলাকায়। তবে তার ভিসার মেয়াদ গত ২০ জুন শেষ হয়ে যায়।

‘সহিংস, বিপজ্জনক ব্যক্তি’

ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের কর্মকর্তা মেরি ওয়ালশ বলেন, মাসুম একজন সহিংস এবং বিপজ্জনক ব্যক্তি। তিনি কুলসুমার ওপর দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন। সেই নির্যাতন থেকেই বাঁচতে কুলসুমা ব্র্যাডফোর্ডের এক সেফহাউজে আশ্রয় নেন।

কিন্তু মাসুম সম্পর্কের ইতি মেনে নিতে পারেননি। তিনি স্ত্রীর অবস্থান খুঁজে বের করে তাকে প্রকাশ্যে, তার শিশুসন্তান ও বন্ধুর সামনে, ধারালো ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন। ওয়ালশ বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল নির্মম ও ঠান্ডা মাথার। আশা করি, আদালতের রায় কুলসুমার পরিবার ও স্বজনদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দেবে।”

বিচারে যা উঠে আসে

আদালতে বিচারক জাস্টিস কটর বলেন, মাসুম “নিষ্ঠুর ও নির্দয়ভাবে” স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। রায়ের সময় বিচারক বলেন, “তুমি নিজের পকেট থেকে ছুরি বের করে কুলসুমার গলায় ও ঘাড়ে একের পর এক আঘাত করেছো। এরপর তাকে মাটিতে ফেলে দিয়েও থামোনি। তুমি তার গলার নিচে ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করো।”

তিনি আরও বলেন, “তুমি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন আঘাত করেছো যা বেঁচে থাকার সুযোগই রাখে না।” আদালত এটিও জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় মাসুম তার স্ত্রীর ওপর পা দিয়ে আঘাত করেন এবং ছুরিকাঘাত করার সময় তার শিশুপুত্র পাশেই ছিল।

অতিরিক্ত অপরাধ ও সাজার বিস্তারিত

বিচারে মাসুমের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। স্ত্রীকে হত্যার পাশাপাশি তিনি তার ওপর শারীরিক হামলা, হত্যার হুমকি এবং তাকে অনুসরণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের দায়েও দোষী সাব্যস্ত হন। ২০২৫ সালের ৫ জুন তিনি আদালতে ম্যানস্লটারের (অর্থাৎ পরিকল্পনাহীন হত্যা) দায় স্বীকার করেছিলেন। তবে প্রসিকিউশন তা প্রত্যাখ্যান করে তাকে হত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি করে।

যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কারের সম্ভাবনা

বিচার চলাকালে প্রসিকিউটর স্টিফেন উড কেসি আদালতকে জানান, মাসুমের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি হোম অফিস বিবেচনা করবে। তবে তা কার্যকর হতে পারে ন্যূনতম ২৫ বছরের সাজা শেষে, অর্থাৎ সাজার ৩ বছর বাকি থাকতেই।