Home অন্যান্য শিমুলের ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই খামার: ব্যর্থতা থেকে বৈশ্বিক রপ্তানিতে অভাবনীয় সাফল্য

শিমুলের ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই খামার: ব্যর্থতা থেকে বৈশ্বিক রপ্তানিতে অভাবনীয় সাফল্য

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পাবনা:   আটঘরিয়া উপজেলার পারসিধাই গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা শিমুল প্রমাণ করেছেন, প্রচলিত কৃষির বাইরে উদ্ভাবনী উদ্যোগও বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। প্রথাগত চাকরিতে আগ্রহ না থাকা এবং নিজস্ব উদ্যোগে সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাকে প্রথমে বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি করে। হাঁসের খামার পরিচালনার ফলে প্রায় ১৮ লাখ টাকা লোকসানের বোঝা তার ওপর পড়ে, যা তাকে প্রায় দিশেহারা করে তোলে। তবে সেই ব্যর্থতার অন্ধকার সময়ে তিনি একটি নতুন উদ্ভাবনের দিকে নজর দেন ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ চাষ।

শিমুল ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখে এই পোকা চাষের ধারণা পান। তিনি গবেষণা করে জানতে পারেন, এই পোকা বা এর লার্ভা মাছ, হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশুর পুষ্টিকর খাবার হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এছাড়া এটি জৈব বর্জ্য খেয়ে বৃদ্ধি পায়, যা একদিকে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, অন্যদিকে বর্জ্যকে মূল্যবান প্রোটিনে রূপান্তরিত করে।

শিমুল তার নতুন উদ্যোগ শুরু করার আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি বৈজ্ঞানিক চাষপদ্ধতি, প্রজনন প্রক্রিয়া এবং বাজারজাতকরণের কৌশল শিখেন। এরপর পাবনার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রাম ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (পিসিডি) তার পাশে দাঁড়ায়। সংস্থাটি ঋণ সহায়তা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদান করে।

প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হওয়ার পর শিমুল তার খামার শুরু করেন। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষে সফলতার ফলে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি প্রায় ১৬ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হন। বর্তমানে পাবনা ও কক্সবাজারে তার মোট তিনটি খামার রয়েছে।

শিমুলের খামারে চাষ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। প্রজননের জন্য প্রাপ্ত মূল পোকা বিশেষ জালের ঘেরের মধ্যে রাখা হয়, যেখানে ডিম পাড়া হয়। ডিম আলাদা জায়গায় হ্যাচিং-এর জন্য রাখা হয়। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে লার্ভা ফুটে বের হয়, যা নির্দিষ্ট ট্রেতে রাখা হয় এবং মুরগি বা মাছের খাবার হিসেবে পচা নাড়িভুড়ি, মাছ বা জৈব বর্জ্য খায়। ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে লার্ভা পূর্ণাঙ্গ হয় এবং বিক্রয়ের উপযোগী হয়ে ওঠে। লার্ভা পরবর্তীতে পিউপা এবং পূর্ণাঙ্গ পোকায় রূপান্তরিত হয়, যা আবার প্রজননের চক্রে যোগ দেয়।

শিমুলের উদ্যোগ এখন দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার খামারের প্রজননের জন্য মূল পোকা ভারত, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত লার্ভা স্থানীয় খামারিদের এবং ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়। সম্প্রতি তিনি কক্সবাজারে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিনিয়োগে আরও একটি বড় খামার স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।

শিমুলের গল্প প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষিতেও অভাবনীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব। এটি কেবল একজন উদ্যোক্তার ভাগ্য পরিবর্তন করছে না, পরিবেশ রক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শিমুলের সফলতা এখন পাবনার অন্যান্য তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস, ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।