হেলথ ডেস্ক: ওজন কমানো নিয়ে মানুষের কৌতূহল যেন শেষ নেই। কেউ কিটো, কেউ লো-কার্ব, কেউ আবার অ্যাটকিনস—নানা ডায়েট প্ল্যানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মগ্ন অনেকেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে “রুটি-ভাত ছাড়া ডায়েট” বা no roti no rice diet এক নতুন প্রবণতা হয়ে উঠেছে। অনেকেই ভাবছেন, চাল-গম বাদ দিলেই ওজন কমবে চটজলদি। কিন্তু বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়, বরং হঠাৎ এমন পরিবর্তনে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।
বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে ভাত মানেই প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু অফিসকেন্দ্রিক জীবনযাপন ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে অনেকেই ভাতকে ‘মেদের মূল’ মনে করে সেটাই বাদ দিতে চান। অথচ, পুষ্টিবিদদের মতে, কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) হল শরীরের প্রধান জ্বালানি—যা থেকে আমরা শক্তি পাই। সেটি হঠাৎ বাদ দিলে শরীর যেন ধাক্কা খায়।
ফিটনেস এক্সপার্ট ও নিউট্রিশনিস্ট দীক্ষা ছাবরা বলেন, “কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। যখন আমরা ভাত বা রুটি খাই, শরীর সেই কার্ব থেকেই এনার্জি নেয়। কিন্তু এগুলো বাদ দিলে শরীর প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে শক্তি জোগাতে, যার ফলে পেশি ক্ষয় হয়।”
অর্থাৎ, প্রথম দিকে ওজন কমলেও, তা মূলত ফ্যাট নয়—পেশি। পেশি কমলে মেটাবলিজমও ধীর হয়ে যায়, ওজন কমার গতি থেমে যায়, বাড়ে ক্লান্তি ও অবসাদ।
এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা অপরিসীম। তাই দীর্ঘদিন কার্বহীন ডায়েট মানলে মনোযোগের ঘাটতি ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
তাহলে সমাধান কী?
দীক্ষা ছাবরার মতে, ওজন কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হল ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, সক্রিয় জীবনযাপন ও সুষম খাদ্যাভ্যাসই হল সঠিক পথ। “চাল বা গম খাওয়ায় কোনও ক্ষতি নেই, যদি তা পরিমিত পরিমাণে হয়,” জানান তিনি। “খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফ্যাট ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস বজায় রাখলে ওজন কমানো সম্ভব, শরীরের ক্ষতি ছাড়াই।”
অতএব, ওজন কমানোর জন্য রুটি-ভাত বাদ দেওয়া নয়, বরং ‘ব্যালান্সড ডায়েট’ই হওয়া উচিত মূল মন্ত্র। কারণ সুস্থ শরীর মানেই কেবল রোগামোটা নয়, বরং টেকসই শক্তি ও স্থায়ী স্বাস্থ্য।










