Home বিনোদন প্রেমিকের ফাঁদে পতন : রূপবিশেষজ্ঞ থেকে গুপ্তচর

প্রেমিকের ফাঁদে পতন : রূপবিশেষজ্ঞ থেকে গুপ্তচর

ভানিয়া গাবেরোভা্ ছবি সংগৃহীত

বিনোদন ডেস্ক:

একদা ছিলেন চোখের পাতায় কারুকাজ করা এক শিল্পী। কপালে জ্বলজ্বল করত পুরস্কারের দীপ্তি, লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে তাঁর বিউটি স্যালন ছিল স্বপ্নময় নারীদের আনাগোনায় মুখর। সেই ভানিয়া গাবেরোভা জানতেন রূপের রহস্য, কিন্তু বুঝতে পারেননি মনের ছলনা। এক প্রেমিকের হাত ধরে তিনি পা রাখলেন এমন এক অন্ধকার পথে, যেখানে সৌন্দর্য নয়, রাজনীতির গুপ্ত ছায়া ও ষড়যন্ত্রের কুহেলিকা বিরাজ করে।

তাঁর প্রেমিক বিসার জ্যামবাজভ, যিনি নিজেকে কখনও ইন্টারপোলের কর্মকর্তা, কখনও ক্যানসারে আক্রান্ত এক করুণ পুরুষ হিসেবে তুলে ধরতেন, তারই প্ররোচনায় একসময় গাবেরোভা হয়ে উঠলেন হানিট্র্যাপ- রুশ গোয়েন্দাদের এক সুশ্রী অস্ত্র। আর এই প্রেম-প্রতারণার যাত্রাপথ একদিন এসে থামল লন্ডনের ওল্ড বেইলির আদালতে, যেখানে তাঁকে শুনতে হয় ছয় বছর আট মাস তিন সপ্তাহের কারাদণ্ড

প্রেমিক না প্রতারক:

আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গাবেরোভার পক্ষে বলা হয় এই তরুণী ছিলেন আসলে ভালোবাসার মায়ায় বিপথগামী। বিসার তাঁর সামনে প্রেমিকের মুখোশ পরে এসেছিলেন, কিন্তু অন্তরে ছিলেন রুশ গোয়েন্দা চক্রের অন্যতম চালক। তাঁর আরেক সঙ্গিনী ক্যাটরিন ইভানোভার সঙ্গে সংসার থাকা সত্ত্বেও গাবেরোভার জীবনকে তিনি খেলনার মতো ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি গ্রেপ্তার হওয়ার মুহূর্তে তাঁরা ছিলেন এক শয্যায়, প্রেমের ছায়ায় মোড়া

তবে বিচারক ছিলেন কঠোর। তিনি বললেন, তিনি (গাবেরোভা) এটিকে রোমাঞ্চকর ও জাঁকালো মনে করেছিলেন। এবং এও জানান, যে অপরাধে তিনি জড়িত, তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ষড়যন্ত্রের ছক:

চক্রের আসল মাথা ছিলেন ওরলিন রুশেভ। গ্রেট ইয়ারমাউথের এক জরাজীর্ণ অতিথিশালায় বসে তিনি পরিচালনা করতেন গোটা নেটওয়ার্ক। সেখানে ছিল এক রহস্যঘেরা ঘর, যার নাম তিনি দিয়েছেন ইন্ডিয়ানা জোনস গ্যারেজ। কেবল নামেই নয়, কার্যকলাপেও তা যেন সিনেমার চেয়ে কিছু কম নয়। বোতলের ভেতরে লুকানো ক্যামেরা, কোকের ক্যান, পুরুষের টাই, এমনকি একটি মিনিয়নস খেলনার মধ্যেও ছিল রেকর্ডিং ডিভাইস

এই চক্রে ছিল ছদ্মনাম  রুশেভ ছিলেন জ্যাকি চ্যান, জ্যামবাজভ ছিলেন ম্যাড ম্যাক্স। তাঁরা নিজেদের লোকজনকে বলত দ্য মিনিয়ন্স

এদের পরিচালনায় পেছনে ছিলেন এক রহস্যময় ব্যক্তি  অস্ট্রিয়ান ব্যবসায়ী ইয়ান মার্সালেক, যিনি এখন ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়। বলা হয়, তিনি রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতেন এবং পুরো নেটওয়ার্ককে দিকনির্দেশনা দিতেন।

শিকার ও ছক:

তারা শুধু তথ্য হাতিয়ে নেননি, করেছেন অপহরণ, পরিকল্পনা করেছেন কূটনৈতিক ভবনে ড্রোনে শুকরের রক্ত ফেলার। এমনকি এক সাংবাদিককে গাবেরোভার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনাও ছিল

তদন্তকারীরা পায় টেলিগ্রাম চ্যাটের এক লক্ষাধিক বার্তা, যেখানে খুন, চক্রান্ত ও জাল নথি তৈরির ছক ছিল গোপন বার্তায় লিপিবদ্ধ।

পরিণতি:

বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন, এই অপরাধ কেবল আইনভঙ্গ নয়, রাষ্ট্রবিরোধী। অর্থের লোভে তারা যুক্তরাজ্যের মাটিকে ব্যবহার করেছে এক রকম যুদ্ধে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যান জারভিস বলেন, এটি স্পষ্ট বার্তা  যারা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে খেলবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করব।

ভানিয়া গাবেরোভার গল্প শুধুই এক গুপ্তচরের কাহিনি নয়, এটি প্রেমে প্রতারিত এক নারীর জীবনের বেদনা। একসময়ের চোখের পাতার শিল্পী, আজ নিজেই ইতিহাসের পাতায় অন্ধকার এক অধ্যায়। যাকে মনে রাখা হবে — প্রেমের ছায়ায় ঢাকা, কিন্তু ষড়যন্ত্রে নির্মম