হেলথ ডেস্ক:
আমরা অনেক সময়ই খাদ্যতালিকায় আয়রন বা ভিটামিন-ডি নিয়ে ভাবি, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, পটাশিয়াম, প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ এটি হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ, পেশির সঠিক কার্যক্রম এবং রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাজ্যের এনএইচএস-এর চিকিৎসক হেলেন ওয়াল বলেন, “পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের কাজ, স্নায়ুর সংকেত আদান-প্রদান এবং শরীরের তরল উপাদানের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য।”
সম্প্রতি কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু লবণ কমিয়ে নয়—সাথে পটাশিয়াম গ্রহণ বাড়ালেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসে।
কতটা পটাশিয়াম দরকার?
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিনের পটাশিয়াম চাহিদা ৩,৫০০ মিলিগ্রাম। এটি প্রায় ১০টি মাঝারি কলার সমান। তবে শুধু কলায় নয়—সবজি, দুধজাত খাবার, মুরগির মাংস ও দানাশস্যেও রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম।
পটাশিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ
সাধারণত পটাশিয়ামের ঘাটতি (হাইপোক্যালেমিয়া) বিরল হলেও অনেকের শরীরে দৈনিক প্রয়োজনীয় মাত্রার কম পটাশিয়াম থেকে যায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পেশিতে টান বা খিঁচুনি
- অতিরিক্ত ক্লান্তি
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- হৃদস্পন্দনের অনিয়ম
- হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা বা অবশ ভাব
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা
বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে, দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া বা বমি হলে, বা কিছু ওষুধ (যেমন ডায়ুরেটিক্স বা হৃদরোগের ওষুধ) গ্রহণের ফলে এই ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
কিভাবে ঘাটতি কাটানো যায়?
চিকিৎসকরা প্রথমেই খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া গেলে ঘাটতি সহজেই পূরণ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শে সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয়। তবে নিজের ইচ্ছায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়ামও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যেসব খাবারে বেশি পটাশিয়াম রয়েছে (প্রতি ১০০ গ্রামে):
- ছোলা – স্ন্যাকস হিসেবে হিউমাস উপকারী
- এভোকাডো – চর্বিজাতীয় খাদ্য হলেও পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ
- পালং শাক – আয়রনের পাশাপাশি পটাশিয়ামও আছে
- ডাল – রোস্ট বা তরকারিতে উপযোগী
- স্যামন মাছ – সামুদ্রিক খাদ্যে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম
- কলা – যদিও মাঝারি কলায় খুব বেশি পটাশিয়াম না-ও থাকতে পারে
- মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি আলু – স্যুপ বা ভর্তায় উপযোগী
- টমেটো ও তরমুজ – সহজলভ্য ও উপকারী
সাপ্লিমেন্ট কি জরুরি?
শুধুমাত্র মারাত্মক ঘাটতির ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পটাশিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেন। সাধারণ দোকানে বিক্রি হওয়া সাপ্লিমেন্টে খুব অল্প পরিমাণ থাকে এবং খাদ্য থেকে সেই চাহিদা সহজেই পূরণ সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পটাশিয়াম গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণই শ্রেয়। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যক্রম এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে পটাশিয়াম একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র।
📣 আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আজই নজর দিন!
আপনার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পটাশিয়াম আছে কি না, তা আজই খতিয়ে দেখুন। হৃদরোগ, পেশিতে খিঁচুনি বা অতিরিক্ত ক্লান্তি—এসব সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে পটাশিয়ামের ঘাটতি।
✅ প্রতিবেদনটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গেও শেয়ার করুন—তাদের সচেতন করুন।
💬 আপনার অভিজ্ঞতা বা মতামত থাকলে নিচে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
📲 নিয়মিত স্বাস্থ্য তথ্য পেতে বিজনেসটুডে২৪.কম-এর সঙ্গেই থাকুন।
#স্বাস্থ্য_সচেতনতা #পটাশিয়াম #হৃদরোগ #পুষ্টিকর_খাদ্য #BusinessToday24