Home আন্তর্জাতিক ভুটানে পর্যটন: সুখ, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক জীবন্ত অভিজ্ঞতা

ভুটানে পর্যটন: সুখ, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক জীবন্ত অভিজ্ঞতা

সংগৃহীত ছবি
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভুটান। হিমালয়ের কোলে ছোট্ট এক রাজ্য, যাকে বলা হয় “হ্যাপিনেসের দেশ।” এখানে পর্যটন কেবল অর্থনীতির অংশ নয়, বরং জীবনদর্শনেরও প্রতিফলন। প্রকৃতি, আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতার নিখুঁত সমন্বয়ে গড়া এই দেশের প্রতিটি যাত্রা যেন আত্মাকে ছুঁয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছেন ভুটানের স্থানীয় পর্যটনকর্মীরা, যারা কেবল গাইড নন, সংস্কৃতির দূত। তেমনি একজন গাইড হলেন পারোর চেনচো লহাম, যিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভুটানের রূপ-রস-গন্ধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।

চেনচো বলেন, তার জন্য গাইডের কাজটি কোনো পেশা নয়, বরং একটি আহ্বান। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি, প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠান ও বৌদ্ধ আধ্যাত্মিকতায় বেড়ে ওঠা এই নারী চান ভুটানের সুখ, শান্তি ও মূল্যবোধ বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। তিনি বলেন, “যখন আমি অতিথিদের আমাদের পবিত্র উপত্যকা ও প্রাচীন গল্পের ভেতর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাই, তখন আমি অনুভব করি আমি দুই জগতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন।”

ভুটানের পর্যটন ব্যবস্থা বিশ্বের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। দেশটি অনুসরণ করে “High Value, Low Volume” নীতি—অর্থাৎ কম সংখ্যক, কিন্তু সচেতন ও সংস্কৃতি-সম্মানী ভ্রমণকারীকে স্বাগত জানানো। এই নীতির উদ্দেশ্য পরিবেশ রক্ষা, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় অর্থনীতিকে টেকসই রাখা।

চেনচো ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি ট্যুর সাজান অতিথিদের আগ্রহ অনুযায়ী। কারো জন্য সাংস্কৃতিক গল্প, কারো জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশীলন, আবার কারো জন্য পাহাড়ি ট্রেক বা ওয়েলনেস রিট্রিট। তিনি বলেন, “আমি চাই আমার অতিথিরা শুধু দৃশ্য দেখুক না, বরং ভুটানের আত্মাকে অনুভব করুক।”

নারী হিসেবে পর্যটন খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়েও তিনি গর্বিত। অনেক নারী ভ্রমণকারী নারী গাইডের সঙ্গে ভ্রমণ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন—এই বিশ্বাসই তার প্রেরণা। তিনি মনে করেন, ভুটানের নারীরা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক ভারসাম্যে এগিয়ে চলেছেন। এখানে নারীরা ভূমি ও পরিবারের দায়িত্ব বহন করেন, আবার আজ তারা নেতৃত্ব ও শিল্পকলার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসছেন।

চেনচোর পছন্দের উৎসব হলো পারো ত্শেচু, যেখানে সূর্য ওঠার আগে উন্মোচিত হয় বিশাল “থংদ্রেল”, গুরু রিনপোচের প্রতিকৃতি। তিনি বলেন, “এটি এমন এক মুহূর্ত, যা দেখা মাত্রই মনে হয় সমস্ত নেতিবাচকতা দূর হয়ে গেছে।”

তার কাছে ভুটান মানে এমন এক দেশ, যেখানে সুখ মানে কম চাওয়া, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যে থাকা, এবং নিজের ভেতরের শান্তিকে উপলব্ধি করা। এ কারণেই ভুটান ভ্রমণ শুধু দৃশ্য নয়—এ এক আত্মার যাত্রা, যা ভ্রমণ শেষে অনেকদিন পর্যন্ত হৃদয়ে থেকে যায়।