Home First Lead সুযোগসন্ধানীদের উত্থান: নির্বাচনী মাঠে ভুয়া ‘নেতা’দের প্রতারণা

সুযোগসন্ধানীদের উত্থান: নির্বাচনী মাঠে ভুয়া ‘নেতা’দের প্রতারণা

মন্তব্য প্রতিবেদন

 আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক অঙ্গনে উৎসবমুখর আবহ। রঙিন ব্যানার, পোস্টার, শ্লোগানে মুখর সারাদেশ। কিন্তু এই উৎসবের আড়ালেই চলছে এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা—রাজনৈতিক পরিচয়ের ভুয়া ব্যবহার। এতে বিব্রত কেবল রাজনৈতিক দল নয়, বিভ্রান্ত সাধারণ ভোটারও।

নির্বাচনের মৌসুম মানেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া। প্রার্থীরা জনসংযোগে ব্যস্ত, নেতারা তৎপর, আর সমর্থকরা মাঠে-ময়দানে সরব। এই সুযোগেই কিছু কুখ্যাত ব্যক্তি, যাদের নাম চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি বা মামলার চার্জশিটে , তারা এখন নিজেদের নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

তাদের কৌশল বেশ সহজ। কোনো জনপ্রিয় প্রার্থী বা দলের বড় নেতার পাশে গিয়ে ছবি তোলা, সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, অথবা ভোট চেয়ে নিজের নামে ভুয়া পদবি ও রাজনৈতিক পরিচয়ে পোস্টারিং। কখনও ‘যুবনেতা’, কখনও ‘নেতা’, আবার কখনও ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে নিজেদের প্রচার করছে এই ছায়ানেতারা। অথচ, দলের কোনো অফিসিয়াল তালিকায় এদের নাম নেই, প্রার্থীও অনেক সময় চেনেন না এদের।

প্রার্থী জনসংযোগে বের হলে এরা কৌশলে ভিড়ে ঢুকে পড়ে। তারপর উপযুক্ত মুহূর্তে হাস্যোজ্জ্বল মুখে ছবি তোলে। পরে সেটিই ব্যবহার হয় নির্বাচনী প্রচারে, একটি ছবি থেকেই তৈরি হয় ‘নেতা’র চেহারা। কেউ কেউ পোস্টারে নিজের মুখ বড় করে দিয়ে লিখে, “অমুক প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে সর্বদা পাশে আছি।” এই ভুয়া ‘পদধারী’দের কারণে প্রকৃত নেতাকর্মীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, আর ভোটারদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ।

এমন কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্যও এক সহজ অস্ত্র হয়ে উঠছে। তারা এইসব ছবি, পোস্টার বা ভিডিও ব্যবহার করে প্রার্থীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালায়। ফলে, একদিকে প্রার্থীকে জনসংযোগে বিব্রত হতে হয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কঠোর অবস্থান। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত স্পষ্টভাবে জানানো, কে দলের অনুমোদিত প্রতিনিধি, কারা নয়। অন্যথায় এই ভুয়া পরিচয়ধারীরা সমাজে নেতিবাচক বার্তা ছড়াবে, রাজনীতির ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আজকের রাজনীতিতে নেতৃত্বের সঙ্কট নয়, বরং বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কটই বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের এই সংবেদনশীল সময়ে যদি এইসব ‘সুযোগসন্ধানী’দের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি—জনআস্থা—আরও দুর্বল হবে।

রাজনীতি মানুষের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্র, প্রতারণার নয়। তাই এখন সময় এসেছে, দলীয় পতাকার নিচে ঢুকে পড়া এই মুখোশধারী চরিত্রদের চিনে নেওয়ার।