Home Second Lead ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো চরম ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো চরম ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ কি একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে? বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের ক্রমাগত সতর্কবার্তা এবং সমসাময়িক ভূ-প্রকৃতি সেই আশঙ্কাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির পুরকৌশল বিভাগ আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম যা তুলে ধরেছেন, তা কেবল একটি প্রবন্ধ নয় বরং বাংলাদেশের আগামীর জন্য একটি চরম সতর্কবার্তা।

নিশ্চিত দুর্যোগ ও আমাদের অপ্রস্তুতি

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যের সবচেয়ে ভীতিজাগানিয়া এবং বাস্তবসম্মত দিকটি হলো—ভূমিকম্প হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল মেগাসিটিগুলো এখন যেন এক একটি ‘টাইম বোমা’। গবেষকের মতে, গত ৫০ বছরে আমরা জনসংখ্যা ও অর্থনীতিতে যতটা এগিয়েছি, পরিকল্পিত নগরায়ণে ততটাই পিছিয়ে পড়েছি। পরিবেশবান্ধবহীন ও নিয়মবহির্ভূত এই উন্নয়নই আজ ভূমিকম্পের ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিএনবিসি ২০২০: কাগজের আইন নাকি জীবন রক্ষাকারী বর্ম?

সেমিনারে মূল প্রবন্ধের একটি প্রধান দিক ছিল ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০’ এর প্রয়োগ। একজন প্রকৌশলী বা স্থপতির কাছে এটি কেবল একটি নির্দেশিকা হতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এটি বেঁচে থাকার গ্যারান্টি। ড. জাহাঙ্গীর আলম স্পষ্ট করেছেন যে, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই কোড মেনে চলা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে ওঠা ভবনগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার অযোগ্য অবকাঠামো দ্রুত অপসারণ না করলে, একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই জাতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

উন্নয়নের মডেল বনাম জীবনের সুরক্ষা

আমরা যখন ডিজিটাল এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তখন অধ্যাপক আলমের এই গবেষণা আমাদের মাটির নিচের অস্থিরতাকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি সঠিকভাবেই চিহ্নিত করেছেন যে, প্রকৌশলী, স্থপতি এবং বাড়ির মালিকদের সম্মিলিত সচেতনতা ছাড়া কেবল আইন দিয়ে এই বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়। উচ্চ ভূমিকম্পের দুর্বলতা রয়েছে এমন এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে ঝুঁকি প্রশমন কৌশল নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির এই সেমিনার থেকে উঠে আসা তথ্যগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা রুখতে পারব না, কিন্তু প্রস্তুতি দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যই কমাতে পারি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের এই পরামর্শগুলোকে আমলে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে? নাকি আমরা আরেকটি বড় বিপর্যয়ের জন্য কেবল অপেক্ষা করব?

উন্নয়ন তখনই সার্থক হবে, যখন তা হবে নিরাপদ। আর সেই নিরাপত্তার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে সঠিক নির্মাণশৈলী এবং জনসচেতনতার মধ্যে।

#EarthquakeAwareness #SafetyFirst #BNBC2020 #BuildingCode #SaveBangladesh #DisasterPreparedness #SouthernUniversity #CivilEngineering #StructuralSafety #BangladeshRisk #UrbanPlanning #PublicSafety #EarthquakeResearch #SafeBuilding #DisasterManagement