Home আইন-আদালত রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে দুই লাখ টাকা জরিমানা

রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে দুই লাখ টাকা জরিমানা

বলিটিলা এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট বিশাল গর্ত। মেশিন দিয়ে বালু তোলায় এলাকার ভূসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোঃমাসুদ রানা, রামগড়(খাগড়াছড়ি): খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার বলিটিলা এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মো. শামসুল হক (৪৮) নামের এক ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত জাহান তুহিনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এ দণ্ডাদেশ দেন।

জানা গেছে, রামগড় সদর ইউনিয়নের বলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শামসুল হক দীর্ঘদিন ধরে কোনো অনুমোদন বা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমির টপ সয়েল নষ্ট করে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এতে সংলগ্ন খাল ও আশপাশের এলাকার পরিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” অনুযায়ী তাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর স্তূপের সামনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানার পাশাপাশি এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডাদেশ প্রদানকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান তুহিন বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী যেকোনো কর্মকাণ্ড আইনত অপরাধ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান চলবে।’

টপ সয়েল বিনাশের মারাত্মক পরিণাম

জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি হলো সবচেয়ে উর্বর স্তর, যা ফসল উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, টপ সয়েল গঠনে হাজার হাজার বছর সময় লাগে, কিন্তু অসচেতন কর্মকাণ্ডের ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর বিনাশের ফলে একাধিক মারাত্মক পরিণাম দেখা দেয়:

  • কৃষি উৎপাদন হ্রাস: টপ সয়েলে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, জৈব পদার্থ এবং অণুজীব থাকে। এটি নষ্ট হয়ে গেলে জমির উর্বরতা চিরতরে কমে যায়, যার ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
  • ভূমিধস ও মরুকরণ: টপ সয়েল পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে। এটি ধ্বংস হলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি এলাকাকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দেয়।
  • জীববৈচিত্র্য ধ্বংস: মাটির উপরিভাগের স্তর অসংখ্য অণুজীব ও প্রাণীর আবাসস্থল। টপ সয়েল ধ্বংসের সাথে সাথে এই জীববৈচিত্র্যও চিরতরে হারিয়ে যায়, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
  • ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস: টপ সয়েল পানি শোষণ করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে পানি দ্রুত গড়িয়ে চলে যায়, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে ভবিষ্যতে সুপেয় পানির সংকট তৈরি হতে পারে।
রামগড়ের বলিটিলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে বালু উত্তোলন করলে প্রাকৃতিক জলাধার ও নদীনালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আশপাশের জমি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বালু তুলতে ব্যবহৃত যন্ত্রের শব্দ ও কম্পনের কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয় কৃষিজমিতে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে তা কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এছাড়া এসব অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে পানি সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর ধরে আশপাশের খাল ও ছড়ার গভীরতা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এবং বর্ষায় ভূমিধসের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

প্রশাসন জানিয়েছে, পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে এবং যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।