Home আন্তর্জাতিক ভগবান মঞ্জুনাথের মন্দির: শত শত ধর্ষণের শিকার নারীর কবর!

ভগবান মঞ্জুনাথের মন্দির: শত শত ধর্ষণের শিকার নারীর কবর!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধর্মস্থালায় অবস্থিত আলোচিত ‘ভগবান মঞ্জুনাথের মন্দির’ নিয়ে এক অভিযোগের জেরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এমনকি, মন্দিরে গণকবর থাকার সন্দেহে আলোচিত এই বিষয়ে খবর ও তথ্য প্রচারেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

তিন দশক ধরে অপরাধের সাক্ষী হয়ে পুড়তে থাকা এক দলিত সাফাইকর্মী, যিনি একসময় এই মন্দিরে কাজ করতেন, এবার সাহস করে সামনে এলেন। নিজেকে ‘অসহ্য গ্লানিবোধ’ও ‘অমানবিক মানসিক নির্যাতনের’ শিকার দাবি করে তিনি জানালেন, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শত শত মরদেহ তিনি কবর দিয়েছেন, যার বেশিরভাগই ছিল যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও কিশোরীদের।

সম্প্রতি ১২ বছর আত্মগোপনে থেকে ফিরে ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ৩ জুলাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতের নির্দেশে তার নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি প্রায় ৬০০ মরদেহ মাটিচাপা দিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর দেহে যৌন সহিংসতার চিহ্ন ছিল। এসব কাজ তিনি করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষের চাপ ও হুমকিতে।

ধর্মস্থলা মন্দির কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার বেলথানগড়ি এলাকায় অবস্থিত, যেটি একটি ৮০০ বছরের পুরনো তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি ভক্ত সেখানে যান। কিন্তু এই পবিত্র স্থানেই চলেছে এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস, এমনটাই দাবি করেছেন ওই সাবেক সাফাইকর্মী।

তার ভাষায়, “আমাকে বলা হতো মরদেহ পুড়িয়ে ফেলো। এমনভাবে পোড়াও যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে। অনেক লাশে ছিল ধর্ষণের চিহ্ন, পোশাক ছেঁড়া, শরীর অ্যাসিডে ঝলসানো।” তিনি জানান, ২০১৪ সালে তার আত্মীয় কিশোরীকে এক মন্দির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যৌন নিপীড়ন করলে তিনি পরিবারসহ পালিয়ে যান।

সম্প্রতি পুলিশের সহযোগিতায় তিনি একটি গণকবর থেকে কঙ্কাল তুলে দিয়েছেন, ছবি ও প্রাথমিক নমুনাও জমা দিয়েছেন। তিনি ব্রেইন ম্যাপিং বা পলিগ্রাফসহ সব ধরনের তদন্তে অংশ নিতে আগ্রহী বলে জানান।

ধর্মস্থলায় এর আগেও নিখোঁজ ও ধর্ষণের অভিযোগ বহুবার উঠেছে। ১৯৮৭ সালে পদ্মলতা, ২০০৩ সালে অনন্যা ভাট, ২০১২ সালে সৌজন্যার ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়েছে বলে অভিযোগ।

মন্দিরটি পরিচালনা করে প্রভাবশালী হেগড়ে পরিবার। বর্তমান প্রধান বীরেন্দ্র হেগড়ে বিজেপি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য ও পদ্মবিভূষণপ্রাপ্ত। ধর্মস্থলা মন্দির কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, তারা ‘স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত’ চায়।

নিখোঁজ অনন্যা ভাটের মা সুজাত ভাট বলেন, “আমার বিশ্বাস, মেয়ের কঙ্কাল ওখানেই আছে। অন্তত কঙ্কালটা খুঁজে দিন—আমি তাকে সৎকার করতে চাই।”

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা ইতিমধ্যে কর্ণাটক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসআইটি গঠনের দাবি জানান। কর্ণাটক সরকার পরে বিশেষ তদন্ত দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই ঘটনার পর কর্ণাটক রাজ্যে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশেও সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। তবুও প্রশ্ন উঠছে—দীর্ঘদিন ধরে কেন এই ভয়ঙ্কর অভিযোগ গোপন রইল?

👉 নিয়মিত আপডেট পেতে চোখ রাখুন businesstoday24.com ওয়েবসাইটে।