Home বিনোদন পর্দায় প্রেমের দেবী মধুবালার জীবনের অজানা অধ্যায়

পর্দায় প্রেমের দেবী মধুবালার জীবনের অজানা অধ্যায়

মধুবালা

বিজেনসটুডে২৪ডেস্ক:  পঞ্চাশের দশকের অনেকখানি জুড়ে সবচেয়ে দামি নায়িকা, পর্দার অবিসংবাদিত প্রেমের দেবী মধুবালা। ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি, ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। মধুবালার বোন মধুর ভূষণ তুলে ধরেছেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জীবনের অজানা অধ্যায়।

মধুর ভূষণ জানান, মধুবালার বয়স তখন কুড়ি-ও পেরোয়নি। হার্টের অসুখ ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট ধরা পড়েছিল। সাধারণ ভাষায় হার্টে ফুটো। তখন তার চিকিৎসা ছিল না। ডাক্তারেরা খুব সাবধানে থাকতে বলেছিলেন। সেইজন্যই নিজের আশেপাশে নানান বাধা নিষেধ, ঘেরাটোপ দুলে রাখতেন মধুবালা।

১৯৫৪ সাল। ‘বহুত দিন হুয়ে’ ছবির শুটিং চলছিল। একদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে আচমকা রক্ত বমি করতে থাকেন মধুবালা। তখন মাত্র কুড়ি ছুঁইছুঁই বয়স। সঙ্গে সঙ্গে দিলীপ কুমার মুম্বাই থেকে খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রুস্তম জাল ভাকিল-কে ডেকে আনেন।চিকিৎসা শেষে ধরা পড়ে অভিনেত্রীর শরীরের ভয়ঙ্কর সেই রোগ।

মধুরের কথায়, “দিদি এত ভীষণ রকমের সুন্দর ছিল, এত ফিট ছিল….যে রোগটার কথা শুনে আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ও নিজেও বিশ্বাস করেনি। গুরুত্বও তেমন দেয়নি। তাই তো প্রকাশ্যে নিজের এই শারীরিক অবস্থার কথা দিদি কখনও তোলেনি। পরপর ছবির শুটিং চালিয়ে গিয়েছে, একের পর এক নতুন নতুন ছবি সাইন করেই গেছে।”

কিন্তু এই মানসিক দৃঢ়তার চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল তাঁকে। শারীরিক রোগ আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রণা ধীরে ধীরে তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল।

১৯৬০ সালে, অসুস্থ শরীর নিয়ে পরিবারের ও ডাক্তারদের পরামর্শ অমান্য করে মধুবালা বিয়ে করেন গায়ক কিশোর কুমারকে।

মধুর ভূষণ বলেন: “দিদি তখন খুব অসুস্থ। আব্বা বলেছিলেন, ‘এখন বিয়ে কোরো না, আগে ডাক্তার কী বলেন শোনো।’ কিন্তু ওরা বিয়ে করে। দশ দিন পরেই কিশোর ভাইয়া ওকে নিয়ে লন্ডন যায়। ডাক্তার সোজা বলে দেন—‘হার্ট একদম শেষ। দু’বছরের বেশি বাঁচবে না।’” বিয়ের কিছুদিন পর কিশোর কুমার ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকেন।

হয়তো জানতেন মধুবালার সময় খুব কম—তাই খুব বেশি আবেগে জড়াতে চাননি। কাজের ব্যস্ততার কারণে তিনি মধুবালাকে রেখে যান তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে একাই দিন কাটাতেন মধুবালা—ফুসফুসভর্তি রক্ত, শরীরভর্তি যন্ত্রণা, পাশে শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডার। আর কিছু ছিল না। মধুর ভূষণের মতে, এই অবিশ্বাস আর চাপা যন্ত্রণা ধীরে ধীরে শেষ করে দেয় মধুবালা-কে। বাইরে থেকে জীবন্ত, ভেতরে থেকে রক্তাক্ত।

ফেব্রুয়ারির এক সকালে, শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়। প্রচণ্ড রক্তপাত শুরু হয়। মধুর বলেন:“আব্বা কিশোর ভাইয়াকে ফোন করেন। বলেছিলেন, ‘ফ্লাইট ক্যানসেল করো কিশোর, ও থাকছে না।’ কিন্তু কিশোর তখন শো-তে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এলেও, সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি। দিদি তখন নিস্তেজ, চোখ তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”