বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, দিনাজপুর: মধ্যপাড়া পাথর খনি আবারও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দেশের একমাত্র এই হার্ডরক খনিতে উৎপাদিত সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি পাথর অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। খনি–সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, নানা কর ও শুল্ক বৃদ্ধি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্রয়–সংক্রান্ত অচলাবস্থার কারণে শিগগিরই উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও খনি বর্তমানে জায়গার সংকটে পড়েছে। ইয়ার্ডগুলো অবিক্রিত বোল্ডার ও সাইজ পাথরে ভরে গেছে। খনির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা যথাসময়ে পাথর নিচ্ছে না। অথচ দেশে বছরে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন পাথরের চাহিদা রয়েছে, যার বিপরীতে মধ্যপাড়া সরবরাহ করতে পারে মাত্র ১৬ লাখ মেট্রিক টন।
উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়াও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিদেশ থেকে আনা বিস্ফোরক (ডেটোনেটর) ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উপর ১০৪% এবং ৩৭% কর আরোপের ফলে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া রয়্যালটি, পেট্রোবাংলার লোনের সুদ এবং অন্যান্য কর মওকুফ না হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি।
খনির এমডি জোবায়েদ হোসেন বলেন, “এভাবে চাপ অব্যাহত থাকলে খনি দীর্ঘমেয়াদে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। বিদেশি পাথরের মান স্থানীয় পাথরের চেয়ে ভালো না হলেও বিশেষ সুবিধা দিয়ে আমাদের বাজার সংকুচিত করা হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও বিদেশি স্বার্থ রক্ষাকারী প্রভাবশালী মহল খনির ক্রয় ও বিপণনকে বাধাগ্রস্ত করছে। অথচ ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে ৬ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই খনি দেশীয় শিল্পের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হতে পারত।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং উৎপাদনও আংশিকভাবে চলছে। তবে দ্রুত কর মওকুফ, ক্রয় চুক্তির বাস্তবায়ন ও বিস্ফোরক আমদানির শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে না আনলে দেশের একমাত্র হার্ডরক খনি কার্যত অকেজো হয়ে পড়তে পারে।