বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, দিনাজপুর: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মধ্যপাড়া পাথরখনিতে কর্মরত খনি শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত সহকর্মীদের পুনর্বহাল ও প্রোডাকশন বোনাস প্রদানের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন। এর ফলে খনিতে ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার সকালে খনি গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকরা। তারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, কয়েক মাস ধরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চললেও কোনও সমাধান না আসায় বাধ্য হয়ে তারা কর্মবিরতির পথ বেছে নিয়েছেন।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের অধীনস্থ প্রকল্পটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে একটি বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম। এর অধীনেই তিন শিফটে পাথর উত্তোলনে যুক্ত ছিলেন শতাধিক শ্রমিক। চলতি বছরের মে মাসে শ্রমিকরা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণ পাথর উত্তোলন করলেও, সেই অনুযায়ী প্রোডাকশন বোনাস পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় শ্রমিকদের মধ্যে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি একাধিকবার জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। উল্টো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া কয়েকজন শ্রমিক— ব্লাস্টার শফিকুল ইসলাম, ড্রিল অপারেটর রফিকুল ইসলাম, অপারেটর ওমর আলী ও জুনিয়র হেলপার হাসান আলীকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়।
চাকরিচ্যুত খনি শ্রমিক ও আন্দোলনকারীদের একজন সোলাইমান ইসলাম বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা ভূগর্ভ থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পাথর তুলেছি। কিন্তু প্রাপ্য বোনাস পাইনি। এখন প্রতিবাদ করায় কয়েকজন সহকর্মীকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় আমাদের আর কোনও উপায় নেই। যতদিন না আমাদের দাবি মানা হবে, ধর্মঘট চলবে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়ামের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা ফোন নম্বর প্রকাশ না করায় কোনও বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
এদিকে খনির মালিক প্রতিষ্ঠান এমজিএমসিএল-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে আজ সকাল থেকে ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবে উপরিভাগে মজুদকৃত পাথরের বিক্রিসহ অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে।” তিনি আরও জানান, “যেহেতু এসব শ্রমিক সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
প্রায় দুই দশক ধরে দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি হিসেবে পরিচিত মধ্যপাড়া প্রকল্পে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আশপাশের এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের অভিযোগ ও কর্তৃপক্ষের অবস্থানের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা অচিরেই কমিয়ে আনা না গেলে সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।