Home ব্যাংক-বিমা ইসলামী ব্যাংকের ভিতরে মধ্যযুগীয় নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৩ কর্মকর্তা

ইসলামী ব্যাংকের ভিতরে মধ্যযুগীয় নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৩ কর্মকর্তা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, খুলনা:খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ইসলামী ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ের ভেতরে একজন স্কুলশিক্ষকের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের স্টোর কক্ষে চোখ-মুখ বেঁধে হাতুড়ি ও প্লায়ার্স দিয়ে ওই শিক্ষককে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষক সাইফুল্লাহ হাজেরী (৩৫) বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জেল্লাল হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীর মামার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি রুজু হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জালিয়াতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সূত্রপাত হয়। নির্যাতনের ঘটনায় আমরা তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছি—তারা হলেন আশিক, মিজান ও মামুন।”

সাইফুল্লাহ হাজেরী ফুলতলার বেলেপুকুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর বাবা এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্ট ব্যাংক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজের মালিক। সেই এজেন্ট ব্যাংক থেকে ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান ও মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। ব্যাংকের ভাবমূর্তি ও গ্রাহকদের চাপ সামলাতে গিয়ে মূল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা হাজেরীর পরিবারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সাইফুল্লাহ বলেন, “আমাকে মঙ্গলবার বিকেলে ব্যাংকে ডাকা হয়। স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে ৪-৫ জন কর্মকর্তা হাতুড়ি দিয়ে পায়ের তালু ও হাঁটুতে আঘাত করেন। নখ তোলার চেষ্টা করেন প্লায়ার্স দিয়ে। পরে সাদা কাগজ, ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয় জোর করে।”

ঘটনার বিষয়ে সাইফুল্লাহর বাবা বলেন, “গ্রাহকের টাকা ফেরতের জন্য আমরা জমি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। এরপরও আমার ছেলেকে এমন অমানবিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।”

হাসপাতালে উপস্থিত সাইফুল্লাহর বোন ও মামা বলেন, “ব্যাংকের ভেতর এমন নির্যাতন কল্পনারও বাইরে। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা চিকিৎসার খরচ দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই অমানবিক নির্যাতনের দায় কি তারা এড়াতে পারেন?”

ইসলামী ব্যাংকের খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুল বারী বলেন, “বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার রাতে জেনেছি। তদন্তের জন্য টিম পাঠানো হয়েছে। যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় আমি ব্যাংকে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু আমরা এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতনের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আত্মসাতের তদন্তও চলমান।

এই ঘটনার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে এজেন্ট পরিচালনা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন নতুনভাবে সামনে এসেছে।