বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় বিস্তৃত মনিপুরী সংস্কৃতির আবাসভূমি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। এখানে বসবাসরত মনিপুরী জনগোষ্ঠী শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য, ধর্মীয় আচার এবং শিল্পকলার ধারক। তাদের সংস্কৃতি, পোশাক, সঙ্গীত, আর বিশেষ করে নৃত্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে করেছে বহুমাত্রিক ও বর্ণিল।
মনিপুরীরা মূলত ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে বহু বছর আগে এসে এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। বর্তমানে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন গ্রাম—চতলপাড়া, আদমপুর, কালিঘাট, মাধবপুর, রাজনগরসহ নানা স্থানে তাদের ঘনবসতি। তারা সমাজে পরিশ্রমী, শিল্পমনস্ক ও সংস্কৃতিপ্রেমী জাতি হিসেবে পরিচিত।
মনিপুরী সংস্কৃতির প্রাণ হলো তাদের নৃত্য ও সংগীত। বিশেষ করে রাসলীলার নৃত্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছে। ভগবান কৃষ্ণ ও রাধার প্রেমকথা কেন্দ্র করে আয়োজিত রাস উৎসব প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আসেন। এই উৎসবে মনিপুরী নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক—ফানেক, ইনাফি ও পাথিয় পোষাকে সজ্জিত হয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে নৃত্য নিবেদন করেন। সেই দৃশ্য যেন প্রকৃতির বুকের ওপর সৃষ্ট এক স্বর্গীয় মুহূর্ত।
মনিপুরী সমাজে নারীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা তাঁতশিল্প, নৃত্যশিক্ষা, পানচাষ ও হস্তশিল্পে যুক্ত থেকে অর্থনৈতিকভাবে পরিবারকে সমৃদ্ধ করেন। তাদের হাতে বোনা রঙিন কাপড় স্থানীয় ও জাতীয় বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শিল্পকর্ম শুধু জীবিকার উৎস নয়, বরং তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।
তবে আধুনিকতার ঢেউয়ে এই সংস্কৃতির টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই শহরমুখী হচ্ছে, ফলে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও ভাষা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সচেষ্ট রয়েছে মনিপুরী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হয়।
মনিপুরী গ্রামগুলোতে ঘুরে বেড়ালে দেখা যায় শান্ত পরিবেশ, পরিপাটি ঘরবাড়ি, ফুলে ঘেরা উঠান, আর প্রার্থনার সুরে ভরা বাতাস। এটি শুধু একটি জাতিগোষ্ঠীর বসতি নয়—এ যেন মানবসভ্যতার বৈচিত্র্য ও সহাবস্থানের এক জীবন্ত প্রতীক।
 
            









