বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: একদিকে কিশোর পুত্রকে হারানোর গভীর শোক, অন্যদিকে তার অঙ্গ দিয়ে এক অপরিচিত শিশুর জীবন বাঁচিয়ে দেওয়ার গৌরব এই বিপরীতমুখী অনুভূতিরই সাক্ষী থাকল কলকাতার আলিপুরের গালাডা পরিবার। মাত্র ১২ বছর বয়সে মারা যাওয়া উমঙ্গ গালাডার মরণোত্তর অঙ্গদানে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে এক ৮ বছরের বালিকা।
এই হৃদয়বিদারক ও মানবিক গল্পের শুরু আরও আগে। খুব ছোট বয়সেই উমঙ্গের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালিসিস করালেও ফল মিলছিল না। শেষপর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া বিকল্প দেখছিলেন না চিকিৎসকরা।
সেই সময় ছেলের প্রাণ বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন উমঙ্গের মা জ্যোতি গালাডা। চলতি বছরের ২৮ মার্চ একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মা ও ছেলের কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার হয়। সফলভাবেই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, এবং প্রথম দিকে সুস্থতার লক্ষণও দেখা গিয়েছিল উমঙ্গের শরীরে।
কিন্তু ভাগ্য নির্মম। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সপ্তম শ্রেণির সেই ছাত্রের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপর ঘটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেন সরবরাহ। হৃদপিণ্ড তখনও সচল ছিল। তবে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
২০ মে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকরা উমঙ্গকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন। সেই কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গালাডা পরিবার যে সিদ্ধান্ত নেয় তা সত্যিই অনন্য। তারা সম্মতি দেয় ছেলের অঙ্গদানের জন্য।
এরপর একটি দ্রুত ও সমন্বিত চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উমঙ্গের যকৃত (লিভার) বিশেষ ব্যবস্থায় মুম্বইতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক ৮ বছরের মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় উমঙ্গের যকৃত। অস্ত্রোপচার সফল হয় এবং নতুন জীবন ফিরে পায় সেই বালিকা।
এই ঘটনাটি চূড়ান্ত শোকের মধ্যেও মানবতার এক দীপ্ত উদাহরণ হয়ে থাকল। চিকিৎসকদের মতে, অঙ্গদান সচেতনতা বাড়ানোর দিক থেকে এটি এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে পারে।