Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য  মহেশখালির পানের খিলি: স্বাদ, সুবাস ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অমোচনীয় অধ্যায়

 মহেশখালির পানের খিলি: স্বাদ, সুবাস ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অমোচনীয় অধ্যায়

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: বাংলার পানের ঐতিহ্য যুগের পর যুগ ধরে একটি সামাজিক রীতির অংশ। কেবল খাওয়ার পর মুখশুদ্ধি নয়, এটি অতিথি আপ্যায়নের, ভালোবাসা বিনিময়ের এমনকি সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। আর এই রীতির অন্যতম ধারক মহেশখালির বিখ্যাত পানের খিলি। পানের এই বিশেষ রূপটি এখন কেবল স্থানীয় মানুষের নয়, সারাদেশ এমনকি প্রবাসী বাঙালিদের কাছেও পরিচিত এক নাম।
পানের খিলি: একটি শিল্প
মহেশখালির খিলির প্রস্তুতি একেবারেই ঘরোয়া ও হস্তনির্ভর। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশি পাতার সঙ্গে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয় সুগন্ধি চুন, সাদা সুপারির কুচি, মৌরি, মিঠা, নারকেল কুরানো, খেজুরের গুড় এবং এক ধরনের বিশেষ ঘরোয়া তৈরি করা গোলাপজল বা রোজওয়াটার। খিলি প্রস্তুতকারীরা বলেন, প্রতিটি উপাদানের মিশ্রণ এবং পানের পাতার ভাঁজই এই খিলিকে আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণ দেয়।
পান বানানো একটি সাংস্কৃতিক শিল্প। প্রতিটি খিলি মোড়ানো হয় পরম যত্নে, যেন এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আতিথেয়তার মনভোলানো ভাষা। যারা এই খিলি খায়, তারা বলেন— মুখে দিলেই যেন এক মিষ্টি নস্টালজিয়া খেলে যায় জিভজুড়ে।
ঐতিহ্যের বাহক পরিবারগুলো
মহেশখালির স্থানীয় বাজারে এখনো বহু পরিবার রয়েছে, যারা পানের খিলি বানানোকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অনেক পরিবার পাঁচ-ছয় পুরুষ ধরে এই কাজ করছেন। খিলির চাহিদা বাড়ায় তারা এখন ঘরের মেয়েরাও এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন। এ এক রীতিমতো পারিবারিক উদ্যোগ, যেখানে প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণে গড়ে উঠছে একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প।
বিশ্বজুড়ে চাহিদা
মহেশখালির পানের খিলির খ্যাতি এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এমনকি আমেরিকাতেও ছড়িয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশেষভাবে অর্ডার করে থাকেন এই খিলি, বিশেষ করে বিয়ে, ঈদ, পূজা বা কোনও সামাজিক উৎসব উপলক্ষে। কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, নিয়মিত রপ্তানির সুযোগ থাকলে এই খাত থেকে আয় হতে পারে কোটি কোটি টাকা।
পর্যটনে নতুন সংযোজন হতে পারে খিলি
মহেশখালি এমনিতেই পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট। সেখানে থাকা বৌদ্ধ মন্দির, পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনস্থলে খিলি হতে পারে এক অনন্য সাংস্কৃতিক স্মারক। স্থানীয়রা চাইছেন সরকার এই ঐতিহ্যকে ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিক এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিক।
সংস্কৃতির ভেতরে প্রোথিত স্বাদের গল্প
মহেশখালির খিলি শুধু একটা পান নয়। এটা এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, যা স্থানীয়দের জীবনের অংশ। যারা একবার খেয়েছেন, তারা জানেন এই খিলির স্বাদ মুখে নয়, থেকে যায় মনে।
যদি সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ এই ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে ধরতে পারে, তাহলে মহেশখালির পানের খিলি হতে পারে ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’-এর গর্ব।