Home কৃষি বুড়ির বাঁধে উৎসবের আনন্দ, মাছ কমে শিকারির মুখে বিষাদ

বুড়ির বাঁধে উৎসবের আনন্দ, মাছ কমে শিকারির মুখে বিষাদ

ছবি সংগৃহীত
মো:সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও: শরতের রোদে চিকচিক করা পানির ঢেউ। শুক নদীর বুকজুড়ে মানুষের কোলাহল—হাতে জাল, পলো, চাবি জাল, খেয়া জাল কিংবা নিছক খালি হাতেই কেউ নেমে পড়েছেন বুড়ির বাঁধে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই বাঁধে আজ সেই ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন হাজারো মানুষ—শুধু মাছ ধরতে নয়, বরং একদিনের প্রাণের মেলায় অংশ নিতে।
ছবি সংগৃহীত

সকালের দিকে যখন সূর্যের আলো পানির ওপর ছায়া ফেলছিল, তখনই শত শত শিকারি নেমে পড়েন বাঁধে। কেউ নৌকায়, কেউ ভেলায়, কেউ বা হাঁটু–সমান কাদা পেরিয়ে জালে টান দেন প্রাণপণে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কিশোর-কিশোরী—সবার চোখে এক ধরনের উচ্ছ্বাস, একধরনের গ্রামীণ প্রতিযোগিতার রোমাঞ্চ।

তবে উৎসবের আনন্দের মাঝেই এবার একটুখানি হতাশার সুর। প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় অনেক শিকারির মুখে বিষাদ। চিলারং গ্রামের আসলাম, রনি ও ফারুক বলেন, “প্রতি বছরই আসি, উৎসবটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। কিন্তু এবারে মাছ খুবই কম। রিং জাল ব্যবহার করায় অন্যদের জাল টানতে কষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিও হচ্ছে।”

এদিকে উৎসব ঘিরে বাঁধ এলাকায় বসেছে খাবারের দোকান, অস্থায়ী বাজার ও শিশুদের মেলায় নানা আকর্ষণ। কারও হাতে পিঠা, কেউ গরম চা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন পানির নিচে জালের খেলা। মাছ কম হলেও উৎসবের উচ্ছ্বাসে কমতি নেই কারও চোখে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫১-৫২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষিজমিতে সেচের সুবিধার জন্য এখানে জলকপাট নির্মাণ করে। সেই থেকে এই বাঁধ স্থানীয় মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। সারা বছর এখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, পানি ছাড়ার সময় একদিনের জন্য সাধারণ মানুষকে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রায় ৫০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই বাঁধ এখন মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবেও পরিচিত।

এবার মাছের ঘাটতির কারণে ক্রেতারাও হতাশ। বাজারে মাছের দাম বেড়ে গেছে, অনেক বিক্রেতা বাইরের মাছ এনে স্থানীয় মাছ বলে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যাকারিয়া বলেন, “এই প্রকল্প স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি। সময়ের সঙ্গে বাঁধের পরিবেশ রক্ষা ও মাছের প্রজনন নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য।”

বিকেলের দিকে যখন বাঁধের জল সরে যেতে থাকে, তখনও কেউ কেউ শেষ আশায় জাল ফেলছেন—হয়তো কোনো চিংড়ি, কোনো বাইন মাছ ধরা পড়বে বলে। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে, কিন্তু বুড়ির বাঁধের উৎসব তখনও চলছে, যেন গ্রামীণ জীবনের এক চিরন্তন আনন্দের প্রতীক হয়ে।