বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: আকবর শাহ থানার সিটি গেট এলাকায় সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ মাছ ব্যবসায়ী। আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন। নিহতরা সবাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা এবং পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। ভোরে ফিশারি ঘাট থেকে মাছ কিনতে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর রাত সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে সীতাকুণ্ড থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান সিটি গেট এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। পিকআপটিতে সামনে বসে ছিলেন তিনজন এবং পেছনে আরও সাতজন মাছ ব্যবসায়ী। ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গেই সামনের আসনে থাকা তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যান।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আকাশ দাস (২৬), অজিত দাস (২৪), রনি দাস (২৫), জুয়েল দাস ও মো. সোহাগ (৩২)। এছাড়া স্থানীয় সূত্রে আরেকজন নিহতের নাম কালা দাস (৩০) বলেও জানা গেছে। তারা সবাই সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে মাছের পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় পিকআপে আটকে থাকা আহতদের বের করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে আহত চারজন সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাজ্জাদ বলেন, “৯৯৯–এ কল পাওয়ার পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালায়। নিহতদের মরদেহ আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একই গ্রামের একসঙ্গে পাঁচ তরুণ ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে সীতাকুণ্ড এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক। এলাকাবাসীরা জানান, মাছের ব্যবসায় যুক্ত থাকায় প্রায় প্রতিদিনই তারা ফিশারি ঘাটে যেতেন। ভোরে একই গাড়িতে ওঠে তারা মাছ আনার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। কিন্তু মুহূর্তের দুর্ঘটনা তাদের প্রাণ কেড়ে নিল।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, অতিরিক্ত গতি ও চালকের অসতর্কতাই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। এছাড়া মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের চারপাশে সতর্কতামূলক চিহ্ন না থাকাও দুর্ঘটনা ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ীদের সহকর্মী ও স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, মহাসড়কে অবৈধভাবে পার্ক করা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি নেই। তাদের দাবি, এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো গ্রামকে বিপর্যস্ত করেছে। প্রতিটি পরিবার এখন শোকে মুহ্যমান।