Home স্বাস্থ্য মাতৃত্বের আনন্দের আড়ালে নীরব মানসিক সংকট

মাতৃত্বের আনন্দের আড়ালে নীরব মানসিক সংকট

প্রসবোত্তর বিষণ্নতা

 হেলথ ডেস্ক: মাতৃত্বের আনন্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক নীরব সংকট হলো প্রসবোত্তর বিষণ্নতা। সন্তানের জন্মের পর শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বহু নারী। তবে সামাজিক সংকোচ, ভুল ধারণা ও সচেতনতার অভাবে এই মানসিক সমস্যাটি দীর্ঘদিন অগোচরেই থেকে যায়।

চিকিৎসকদের মতে, প্রসবোত্তর বিষণ্নতা সাধারণ দুশ্চিন্তা বা সাময়িক মনখারাপ নয়। এটি একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সন্তান জন্মের কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত মায়েরা দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখ, হতাশা, একাকিত্ব, অতিরিক্ত উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর প্রতি স্বাভাবিক আবেগ গড়ে উঠতেও বাধা সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যার প্রকৃত চিত্র এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রসবোত্তর বিষণ্নতায় আক্রান্ত নারীদের বড় একটি অংশ কখনো চিকিৎসকের কাছে যান না। পরিবার ও সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুল ধারণা এবং লজ্জার সংস্কৃতি নারীদের মুখ বন্ধ করে রাখে।

হরমোনজনিত পরিবর্তন, দীর্ঘ প্রসব যন্ত্রণা, ঘুমের অভাব, আর্থিক চাপ, পারিবারিক সহযোগিতার অভাব এবং পূর্বের মানসিক সমস্যার ইতিহাস এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রথমবার মা হওয়া নারীদের পাশাপাশি সিজারিয়ান ডেলিভারির পরও ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলে চিকিৎসকরা জানান।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো শনাক্ত করা গেলে প্রসবোত্তর বিষণ্নতা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কাউন্সেলিং, পারিবারিক সহায়তা ও প্রয়োজনে ওষুধের মাধ্যমে আক্রান্ত মা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। এজন্য প্রসবের পর মায়ের মানসিক অবস্থার দিকে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসবোত্তর যত্নের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মাতৃসেবা কেন্দ্রগুলোতে সচেতনতা বাড়ানো গেলে বহু মা নীরব কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

প্রসবোত্তর বিষণ্নতা কেবল একজন নারীর ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি একটি জনস্বাস্থ্য ইস্যু। মা সুস্থ থাকলেই সুস্থ শিশু ও সুস্থ পরিবার গড়ে ওঠে। তাই মাতৃত্বের পর নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।