বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আবারও নৃশংসতা শীর্ষে। মাত্র কয়েকদিন আগে এক যুবদল নেতাকে গণপিটুনির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এবার মনছুর মিয়া (৩৫) নামে এক যুবককে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনের সময় এক নারী ও তার শিশু সন্তানও আতঙ্কিত অবস্থায় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উনকোট গ্রামে। নির্যাতনের শিকার মনছুর মিয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি এবং তিনি কটপাড়া গ্রামের হাফেজ আহমেদের ছেলে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কেউ আটক করতে পারেনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরা মনছুরকে একাধিক ব্যক্তি লাঠি, কিল, ঘুষি ও লাথি মারছেন। তাকে খাটের ওপর ফেলে নৃশংসভাবে আঘাত করা হচ্ছে এবং তার শরীরে রক্তাক্ত চিহ্ন স্পষ্ট। পাশেই এক নারী ও তার ৫ বছরের সন্তান আতঙ্কিত চিৎকার করছেন। শিশুটি মায়ের পিছু পিছু যেয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছে। এরপর নির্যাতনকারীরা মনছুরকে ঘর থেকে বের করে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটাতে থাকে এবং শেষপর্যন্ত তার মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
মনছুর মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে কাঠের কাজ করতে যাই। কাজের বকেয়া টাকা নিতে গেলে উনকোট গ্রামের নাছির ও সজীবের নেতৃত্বে ১৫–২০ জন আমাকে ধরে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করে। পরবর্তীতে তারা আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়। পরে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।”
মনছুরের বাবা হাফেজ আহমেদ বলেন, “আমার ছেলে ঘরের কাজের টাকার জন্য সেখানে গিয়েছিল। তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি চাই এই ঘটনার পূর্ণ বিচার হোক।”
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নজরে এসেছে। যদিও নির্যাতনের শিকার যুবক থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি, তবে ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
এ ঘটনার আগেই ১৬ অক্টোবর রাতে চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেনের সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয় এবং প্রবাসীর স্ত্রীকেও মারধর করা হয়। পরদিন স্থানীয় সালিশ বৈঠকে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ৫ লাখ টাকার দেনমোহরে তাদের পুনরায় বিবাহ দেওয়া হয়।
এই দুই ঘটনাই চৌদ্দগ্রাম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের দিকটি প্রকাশ করছে, যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশি পদক্ষেপ শুরু হলেও তাত্ক্ষণিকভাবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।









