Home অন্যান্য নেশা: সর্বনাশা এক নীরব আগুন

নেশা: সর্বনাশা এক নীরব আগুন

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: রাত তখন গভীর। শহরের এক প্রান্তে পুলিশ হানা দেয় একটি পুরনো গ্যারেজঘরে। ধরা পড়ে তিন কিশোর, যাদের চোখ লাল, শরীর কাঁপছে, মুখে ভয় আর হতাশার ছায়া। পাশে পড়ে থাকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, ট্যাবলেট, গ্লাসভর্তি রঙিন পানীয়। বাংলাদেশে এমন চিত্র আজ আর নতুন নয়—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এই নীরব সর্বনাশের চিত্র ধরা পড়ে।
এক ভয়াবহ প্রবণতা

দেশে মাদকের বিস্তার এখন সামাজিক ব্যাধির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ঘুমের ট্যাবলেট, হেরোইন—নাম শুধু বদলাচ্ছে, সর্বনাশের ধারা একই থাকছে। শহর থেকে গ্রাম, শিক্ষার্থী থেকে প্রবাসফেরত যুবক—কারও মাঝেই নিরাপত্তা নেই।

জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংস্পর্শে আসে। এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরতে পারে না সেই অন্ধকার পথ থেকে।

কেন যুবকরা জড়িয়ে পড়ে?

মাদকের নেশা কারও জীবনের প্রথম স্বপ্ন নয়। এটা আসে এক ধরনের শূন্যতা থেকে—পারিবারিক অবহেলা, হতাশা, বন্ধুবান্ধবের চাপ, ব্যর্থ প্রেম, বেকারত্ব অথবা নিছক কৌতূহল থেকে।
একজন মাদকাসক্ত তরুণ বলে, “শুরুতে শুধু বন্ধুদের সাথে মজা করতে গিয়ে শুরু করি। তারপর একটা সময় দেখি, আমি ছাড়া বাঁচতে পারছি না।”

পারিবারিক ভাঙন, সমাজের দায়

মাদকের প্রভাবে শুধু ব্যক্তি নয়, ভেঙে পড়ে পরিবার, ভেঙে যায় স্বপ্ন, হারিয়ে যায় সম্ভাবনা। বহু মা-বাবা সন্তানকে বাঁচাতে চেষ্টার শেষ সীমা পর্যন্ত যান, কিন্তু নেশার জালে আটকে যাওয়া সেই মুখ আর আগের মতো থাকে না।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বড় একটি অংশের কিশোর অপরাধের সঙ্গে মাদক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন—সবকিছুর পেছনে রয়েছে মাদকের প্ররোচনা বা অর্থ জোগানের প্রয়োজনে সংঘটিত অপরাধ।

কীভাবে রোধ সম্ভব?

প্রথম কাজ, সচেতনতা। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে। পরিবারের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—শুনতে হবে সন্তানের কথা, সময় দিতে হবে, নজরে রাখতে হবে তাদের চলাফেরা, সঙ্গ।

দ্বিতীয়ত, সরকারকে মাদক পাচার রোধে কঠোর হতে হবে সীমান্ত অঞ্চলে। কিন্তু শুধু আইন দিয়ে নয়, প্রয়োজন কর্মসংস্থান, মানসিক সহায়তা, এবং আসক্তদের জন্য পুনর্বাসন ব্যবস্থা।

আলো এখনো আছে

সবাই হারিয়ে যায় না। যারা মাদকের অন্ধকার থেকে ফিরে আসতে পেরেছে, তাদের মুখে এখন নতুন জীবনের কথা। এক rehabilitated তরুণ বলেন, “আমি ভেবেছিলাম আমি শেষ। কিন্তু আমার মা এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছাড়েনি। আজ আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, গান লিখি, জীবনের মানে বুঝি।”

শেষ কথা

নেশা মানে শুধু নিজেকে ধ্বংস করা নয়—এর মানে পরিবার, সমাজ ও আগামী প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। এ লড়াই শুধু পুলিশ বা সরকারের নয়—এ লড়াই আমাদের সবার। নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। জীবন অনেক সুন্দর, অনেক সম্ভাবনাময়—এক ফোঁটা নেশা যেন তা শেষ না করে দেয়।