আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা বিক্ষোভ, সহিংসতা আর জনআস্থার গভীর সংকটের মধ্যে অবশেষে মাদাগাস্কার প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা তাঁর সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। রাজধানী আন্তানানারিভোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে পানি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছিল। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে টেলিভিশন ভাষণে রাজোয়েলিনা বলেন, ‘‘যদি কোনো মন্ত্রী দায়িত্বে ব্যর্থ হয়ে থাকে, আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি। জনগণের কষ্ট আমি বুঝতে পেরেছি, নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে আনা হবে।’’

প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর জানা গেছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর মধ্যে বর্তমান মন্ত্রীরা অস্থায়ী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গত কয়েক দিনের সহিংসতায় অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যদিও সরকার এই সংখ্যাকে গুজব বলে অস্বীকার করেছে।
যুব আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সংগঠিত তরুণরা দাবি তুলেছিল—নিয়মিত পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং নাগরিক জীবনে ন্যূনতম নিরাপত্তা। ‘‘Leo’’ (আমরা বিরক্ত) ও ‘‘Justice for Madagascar’’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে তারা রাস্তায় নামে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। বেশ কয়েকটি দোকান, বাজার ও শপিং মলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলন ছিল মূলত Gen Z প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তরুণ নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন গড়ে উঠছে, মাদাগাস্কারও এখন সেই ঢেউয়ের অংশ। প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা ক্ষমা চেয়ে যুব সমাজকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও বাস্তবে তাদের আস্থা ফেরানো সহজ হবে না।
এখন মূল প্রশ্ন—নতুন সরকার কত দ্রুত গঠিত হবে এবং তারা কি সক্ষম হবে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। পাশাপাশি ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করা এবং আন্তর্জাতিক আস্থা পুনর্গঠনের চাপও থাকবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি মাদাগাস্কারের জন্য এক ধরনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’, যেখানে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই এখন জনআস্থার পরীক্ষায় মাপা হবে।