Home সারাদেশ সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন: কলমের সৈনিক, মানবতার প্রতীক

সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন: কলমের সৈনিক, মানবতার প্রতীক

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম: সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়—এটি এক দায়বদ্ধতা, এক আদর্শচর্চা। এই আদর্শের নিরবধি পথিক একজন মানুষ, যিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে কলম দিয়ে সমাজকে প্রতিফলিত করেছেন, তার নাম সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন। সাতকানিয়া থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, এমনকি ঢাকার সাংবাদিক মহলেও তার অবদান স্মরণীয়। তিনি শুধু সাংবাদিক নন, এক জীবন্ত কিংবদন্তি, এক মানবিক চরিত্র।

দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কাজ করেছেন দৈনিক পূর্বদেশ, দি বাংলাদেশ অবজারভার, মর্নিং পোস্ট, চট্টগ্রামভিত্তিক দৈনিক আজাদী ও দেশবাংলা-সহ বহু গণমাধ্যমে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায়ের পাঠকের কাছে সত্য, ন্যায় ও সমাজের প্রতিচ্ছবি পৌঁছে দিয়েছেন সুনিপুণ দক্ষতায়।

তার সাংবাদিকতা জীবনের এক উজ্জ্বল অধ্যায় ছিল প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করা। ভয়েস অব আমেরিকার এই সাবেক প্রতিনিধি, ডিইউজে ও বিএফইউজের নেতা গিয়াস কামালের সঙ্গে তার ছিল গভীর পেশাদার ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তারা একসঙ্গে বহু জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আলোচনাসভা থেকে শুরু করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমিতির সংগঠনতেও খোকনের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী।

১৯৭৩-৭৪ সালে সাতকানিয়া প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে তৎকালীন তথ্য ও বেতার মন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় যাওয়ার ঘটনা আজো অনেকের মনে দাগ কেটে আছে। তিনি তখন বিএফইউজের সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা জামাল ভাইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেন। ঢাকায় জামাল ভাই কিছু সমস্যায় পড়লে খোকন নিজ দায়িত্বে সেসব সমাধানে এগিয়ে আসেন—এটাই তার নেতৃত্বের পরিচয়।

সাহসিকতার নজির রেখেছেন স্থানীয় পরিসরেও। সাতকানিয়ার টাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে একদল যুবকের মঞ্চ দখলের চেষ্টা প্রতিহত করে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন। এতে তিনি স্থানীয় সাংবাদিক সমাজে সাহসী ও দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।

শুধু সাংবাদিকতা নয়—মানবসেবার ক্ষেত্রেও তার অবদান অনন্য। দুইশত বছরের পুরনো একটি কবরস্থানে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজ তিনি নিজে শুরু করেন। পাশাপাশি একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা গঠনের জন্য মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে আবেদন করেন। তার এই প্রচেষ্টা শুধু উন্নয়ন নয়, সমাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতার প্রকাশ।

ব্যক্তিগত অর্থায়নেও তার অবদান অনস্বীকার্য। ব্যক্তিগত এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভোয়ালিয়াপাড়া মাঝের মসজিদে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে তিনি এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অসহায় ও অসুস্থ প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়িয়ে, অনেক সময় জোর করে হাতের মুঠোয় টাকা গুঁজে দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন কেমন হওয়া উচিত মানবতা।

একবার সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রফিক গুরুতর অসুস্থ হলে, ফেসবুকে পোস্ট দেখে খোকন নিজে নোহা গাড়ি ভাড়া করে সাতকানিয়া থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে তাকে বাসা থেকে নিয়ে এসে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি করান। সাথে নেন দুজন সহকর্মী সাংবাদিককে। এমন সহমর্মিতা আজকের দিনে এক বিরল উদাহরণ।

আজীবন অকৃতদার খোকন হজ করেছেন কয়েক বছর আগে। বয়সের ভারে আজ নানা অসুস্থতা তাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু মনোবল দুর্জয়। ফটোগ্রাফি ছিল তার শখ—চোখ দিয়ে খুঁজেছেন জীবনের রঙ ও রূপ।

সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকনের জীবন কেবল কাগজে কলমে নয়, মানুষের হৃদয়ে লেখা এক অনন্য অধ্যায়। তিনি সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ও মানবিকতার এক ত্রিবেণী সম্মিলন। তার জীবনচর্চা ও অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।

তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় আমরা সবাই প্রার্থনা করি। সমাজ যেন এমন মানবিক সাংবাদিককে কখনও ভুলে না যায়।