বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: টেকনাফে মানব পাচারকারীদের গোপন আস্তানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার গভীর রাতে উপজেলার দক্ষিণ লম্বরী এলাকার একটি দুর্গম পাহাড়ি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। রোববার সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বিজিবি টেকনাফে মানব পাচার ও অপহরণচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি মালয়েশিয়া পাচারের নামে অপহরণের শিকার হয়েছেন—এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ লম্বরীর পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে হাফেজ আহমদের ছেলে মো. সাইফুল ইসলামের আস্তানা থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগীরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এবং দালালদের মাধ্যমে ফোনে প্রলোভনে পড়ে এখানে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
উদ্ধারকৃতরা জানান, মোবাইল ফোনে বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের টেকনাফে আনা হয়। পরে কৌশলে অপহরণ করে পাহাড়ি আস্তানায় আটকে রাখা হয়। তাদের পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল অপহরণকারীরা। কেউ কেউ জানান, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাদের ওপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও করে স্বজনদের কাছে পাঠানো হতো।
স্থানীয় এক বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, “অনেক দিন ধরেই এই এলাকায় অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা ছিল। আমরা ভয়ে কিছু বলতাম না। আজকে যেভাবে উদ্ধার করা হলো, তাতে অন্তত কিছু প্রাণ রক্ষা পেল।”
আরেকজন বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, “বিজিবি সময়মতো না এলে হয়তো আরও অনেক প্রাণহানি হতো। সাইফুল নামের ছেলেটা আগেও এমন কাজে জড়িত ছিল বলে শুনেছি।”
বিজিবি অধিনায়ক আশিকুর রহমান আরও বলেন, “চক্রটির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং পাচারকারী চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২৪ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাগরপথে মানব পাচারের সময় বিজিবির আরেকটি অভিযানে মো. সাইফুল ইসলাম চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সে সময় তার বিরুদ্ধে মানব ও মাদক পাচারের অভিযোগে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়। তখন পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই শনিবার রাতের এই সফল অভিযান পরিচালিত হয়