Home First Lead যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শত কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শত কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ছবি: আল জাজিরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে থাকা একাধিক বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। অর্থ পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের ভিত্তিতে নেওয়া এই পদক্ষেপে অন্তত ১১ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪০ কোটি টাকা) মূল্যের লন্ডনের সেন্ট জনস উড এলাকার একটি বাড়ি ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে, অর্থাৎ বিক্রি বা স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) জানিয়েছে, এনসিএ এখনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও নিশ্চিত করেছে যে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি সিভিল তদন্ত চলছে এবং একাধিক সম্পত্তির বিরুদ্ধে ‘অ্যাসেট ফ্রিজিং অর্ডার’ জারি হয়েছে। এনসিএ-র এক মুখপাত্র আই-ইউনিটকে বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, এনসিএ চলমান একটি সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্পত্তির বিরুদ্ধে জব্দ আদেশ নিশ্চিত করেছে।”

২০২৩ সালের অক্টোবরে আল জাজিরা ‘দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নস’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান লন্ডনে ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। ভিডিও ফুটেজে তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি তুলে ধরা হয়, যেখানে তিনি ব্যয়বহুল স্যুট, ডিজাইনার ‘বেবি ক্রোক’ চামড়ার জুতা ও লন্ডনের অভিজাত পাড়ায় বসবাস করছেন বলে উঠে আসে।

সেই গোপন সাক্ষাৎকারে সাইফুজ্জামান বলেন, “আমি শেখ হাসিনার কাছে ছেলের মতো। তিনি জানেন, আমার এখানে একটি ব্যবসা আছে।” যদিও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আইনে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলেও, তিনি লন্ডন, দুবাই ও নিউইয়র্কে ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এসব সম্পত্তির কোনো উল্লেখ তিনি বাংলাদেশে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে করেননি।

চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের এই সন্তান শেখ হাসিনার সরকারে ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে শত শত মানুষ নিহত হলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নতুন সরকার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আইনগত সহায়তার ভিত্তিতে এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এসব দুর্নীতির দায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করতে চায়।

এদিকে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে বলেছেন, “আমার বিদেশি সম্পদ বাংলাদেশের বাইরের বৈধ ব্যবসা থেকেই এসেছে। এটি একটি উইচ-হান্টিং।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিএ-র পদক্ষেপ কেবল একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা। এর ফলে অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ গড়ার চেষ্টা আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়বে।