সুস্মিতা সোম:
অফিসের ঠান্ডা ঘর থেকে বেরোতেই গরম হাওয়ার দমকা যেন শরীরের ভিতর ঢুকে দাপাদাপি আরম্ভ করে দিল। গলাটাও শুকিয়ে আসছে। তেষ্টাও পেয়েছে বেশ। অফিসে ঢুকে একটু ঠান্ডা জল খেয়ে এলে হত। না, থাক। অনেক কষ্টে আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ার অনুমতি আদায় করা গিয়েছে। তার ব্যাংকের ম্যানেজার ভদ্রলোক এমনিতে ভালো মানুষ। কিন্তু বড্ড খুঁতখুঁতে। এটা-ওটা এমন ফ্যাঁকড়া বার করে যে তার সব হ্যাপা সামলাতে হয় অরিত্রকে। চাকরিটা নতুন, বয়সটাও অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কম, তাই বসের এইসব বায়নাক্কা তাকে মেনে নিতেই হয়। ওদিকে বাড়িতে বৌটাও যে নতুন, তারও হাজারো ঝক্কি-ঝামেলা সামলানোর দায়িত্ব যে তাকেই পোহাতে হয়, একথা আর বসকে কে বোঝায়।
আজ বিয়ের পর পিয়ার প্রথম জন্মদিন। অ্যাকাডেমির দুটো টিকিট কেটেছে অরিত্র। নান্দীকার-এর নতুন নাটক। পিয়া আবার নাটক-পাগল। নাটক দেখে খাওয়াদাওয়া করে ফিরবে। দরদর করে ঘাম গড়াচ্ছে পিঠ-বুক বেয়ে। এই মধ্য শরতেও রোদ্দুরের কী দাপট! ফেরার বাসটা এখন ঠিকঠাক সময়মতো পেলে হয়।
-আরে অরিত্র না? তা, হেঁটে হেঁটে যে, অফিসের গাড়ির কী হল?
ভাবনার জাল থেকে বেরিয়ে অরিত্র স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। ব্যক্তিটি কে, কোথায় দেখেছে। তার নাম ধরে ডাকছে, তার মানে পূর্বপরিচিত নিশ্চয়ই।
-কৃত্তিবাসকে ভুলে গেলি এরই মধ্যে? না হয় চাকরিটার মধ্যে অনেক ফারাক, তা বলে আমি মানুষটার খোলস তো একই আছে। চোখ থেকে কালো চশমাটা খুলে ঘাম মোছে কৃত্তিবাস।
-ভুলে যাব কেন? আসলে হঠাৎ তো, আর তোর ওই কালো চশমাটা এমন বেঢপ যে, মুখের অর্ধেকটাই চশমার পেছনে চলে গেছে।
– ‘ওঃ হো হো, তা হবে। আসলে এই চশমাটা দিয়েছে আমার ছোট শালি। বাড়ি ফিরছিস বুঝি! আজ এত সকাল সকাল! তোর আর আমার তো দেখি একই অবস্থা, হাঁটা ছাড়া অন্য উপায় নেই। এই শালার অবরোধ যে কখন উঠবে, কখন বাস পাওয়া যাবে কে জানে? রাজনীতির এই বেলেল্লাপনায় আমার আর তোদের মতো সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। এর মধ্যে ঋতঞ্জয়ের বাড়ি গিয়েছিলিস নিশ্চয়ই?’
-‘সব্বোনাশ, অবরোধ! কোথায়? কেন? কী কারণে?’
-‘অবরোধের কী কোনও কারণ লাগে অরিত্র? এখন তো শাসক হোক বা বিরোধী সকলের একটাই কাজ- নারীজাতির সম্মান রক্ষা। ধর্ষণ ধর্ষণ করে হেদিয়ে গেল গোটা পশ্চিমবঙ্গটাই। আরে বাবা, মেয়েগুলোর অবস্থা দেখেছিস? দিনে দিনে তো জামা-কাপড় ছোট হয়েই চলেছে। সন্ধের মধ্যে বাড়ি ফেরা, সে তো আজ প্রাগৈতিহাসিক যুগের কথা, কানে ফোন, হাতে টাকা, সঙ্গে একগাদা ইয়ার বন্ধু! এখানে ধর্ষণ হবে না তো কি দুগ্গা প্রতিমা পুজো হবে? ছাড় ওসব কথা, ভেবে কোনও লাভ নেই। এখন বল, ঋতঞ্জয়কে কেমন দেখলি?’
-না, যাওয়া হয়নি, যাব ভাবছি, এরই মধ্যে একদিন।’
-সে কি! একদিন মানে?
– না, আসলে, কেন কী হয়েছে, কোন খবর…?’
কৃত্তিবাস বেশ ঘন হয়ে আসে। – খবর মানে, খবরই খবর। সাংঘাতিক খবর। ডাক্তারি রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে ওর ভিসা পাওয়া।
-হ্যাঁ, সে তো হতেই পারে। ডাক্তার রিপোর্ট না দিলে অসুস্থ মাকে ফেলে সে যাবে কেমন করে। বিশেষ করে তোর কথামতো এই কাজের জন্যই যখন আসা। আর তা ছাড়া ওর মা-রও তো আর কেউ নেই। বেঙ্গালুরুতে একবার ফিরে গেলে তো আবার ফিরতে অনেকদিন লেগে যাবে। তাতে ওর পড়াশোনা চাকরি সবেরই ক্ষতি।
-না, তাহলে সত্যিই তুই কিছু জানিস না। একটা অদ্ভুত ধরনের হাসিতে মুখটা অপরিচিত হয়ে যায় কৃত্তিবাসের। আসলে তুই তো ওর বন্ধু, ভালো বন্ধু, তাই ওর সব ভালো, আগামাথা ল্যাজামুড়ো সব-সব। কিন্তু এই কৃত্তিবাসের মানুষ চিনতে ভুল হয় না, সেদিনও না। আজও না।
এমনিতেই মধ্য শরতের এই আকাশ শীতল হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই। তার ওপর একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত এই কৃত্তিবাসী আবির্ভাব। ব্যস্ত হয়ে ঘড়ি দেখে অরিত্র। আসলে রেহাই চায় এখান থেকে।
ধনী পরিবারের ছেলে ঋতঞ্জয়। ঋতঞ্জয় মিত্র মজুমদার। তার মা আর বাবা দুজনেরই উপাধি ব্যবহার করত তার নামের সঙ্গে। অরিত্ররা যে পাড়ায় থাকত সেই পাড়াতে ঋতঞ্জয়রাই ছিল বড়লোক। অর্থের দিক থেকে তো বটেই, হাবেভাবে তার চাইতেও বেশি। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, বাড়িময় ঘুরে বেড়ানো বিরাট অ্যালসেশিয়ান কুকুর, জয়ের মা-বাবার ইংরেজিতে কথোপকথন- সব মিলিয়ে প্রতিদিনের দেখা ঈর্ষণীয় সুখের ছবি। সেই ছবিকে সুন্দরতর করেছিল জয়ের মতো ছেলে। এমন আদ্যোপান্ত ভালো ছেলে এ তল্লাটে তো নয়ই, ইস্কুলেও ছিল না। অরিত্রর অহংকার বলতে ছিল ওইটুকুই, পাড়াতে আর পড়াতে একমাত্র ওকেই পছন্দ করত জয়। ধীরে ধীরে দুজনের পড়াশোনার জগৎ আলাদা হয়ে গেছে সময়ের ব্যবধানে। জয় এমবিএ করে বেঙ্গালুরু আর অরিত্র ইকনমিক্স নিয়ে পাশ করে ব্যাংকের চাকরিতে। সময় কেটে গিয়েছে হুহু করে। চাকরি পাওয়ার পর অরিত্র পুরোনো পাড়া ছেড়ে অফিসের কাছাকাছি একটা ফ্ল্যাটে চলে এসেছে। আর জয় বাইরে, তাই প্রথমে যোগাযোগ থাকলেও সেটা আস্তে আস্তে কমে এসেছিল।
অফিসে নিজের ঘরে কাজের টেবিলে বসে কাচের গেলাসে রাখা জলটুকু এক নিঃশ্বাসে শেষে করে অরিত্র। কাল এত ভালো একটা নাটক দেখার পরও ঘুরেফিরে কেবল কৃত্তিবাসের কথাগুলোই মনে পড়ছে। ঋতঞ্জয় তার অনেকদিনের বন্ধু। খুব গভীরের কথা না জানলেও তাঁকে চিনতে তার এতটা ভুল হতেই পারে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না একেবারেই যে, এই জয়ের মতো ছেলে জড়িয়েছে ধর্ষণের মতো অতি খারাপ একটা ঘটনার সঙ্গে। আর জড়িয়েছেও বলা যাচ্ছে না, সেই নাকি এই ঘটনার নায়ক। কিন্তু ওই কৃত্তিবাস যেরকম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, তার সবই তো আর মিথ্যা হতে পারে না। যদিও কৃত্তিবাসটা বরাবরই ওইরকমই। যে কোনও ঘরোয়া খবরে আগ্রহ একটু বেশিই। জয় সম্পর্কে অরিত্রর মুগ্ধতার জায়গায় ফাটল ধরানোর জন্য সেই এই খবরটা প্রথম জোগাড় করেছিল যে, মিত্র মজুমদার জয়ের নিজের বাবা নয়, জয়ের মাকে বিবাহ করেছিল বর্তমান এই সন্তানটির দায়দায়িত্ব বহনের সমস্ত শর্ত আদায় করে।
পিয়া গান গাইছে রান্নাঘরে- ‘শরতে আজ কোন অতিথি, এল প্রাণের দ্বারে….’ আজ কি পূর্ণিমা! চাঁদের আলোয় বারান্দা ভরে গিয়েছে এই সন্ধ্যাবেলাতেই। চেয়ারটা টেনে নিয়ে অরিত্র হাঁক পাড়ে- পিয়া, চা-টা দাও তাড়াতাড়ি। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল যে।
ট্রেতে দু’কাপ চা আর চারটে গরম শিঙাড়া নিয়ে গুনগুন করতে করতে পিয়া বারান্দায় আসে। টেবিলে ট্রেটা নামিয়ে রেখে বলল- তোমার কোনও এক বন্ধু ফোন করেছিল। তোমার খোঁজ করছিল।
-বন্ধু? আমার? তুমি চেনো না? কী নাম বলল?
-নাম তো কিছু বলল না, বলল আপনি নিশ্চয়ই মিসেস অরিত্র। বলবেন ওকে, আমি ওর পুরোনো বন্ধু। আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালো লাগল। অরিত্রকে বলবেন, আমিই ওকে ফোন করব।
অন্যমনে চায়ে চুমুক দেয় অরিত্র। তাহলে কি জয় ফোন করল? ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে ফোন করার মতো মানসিক অবস্থায় আছে কী করে? অরিত্রের অন্যমনস্কতা লক্ষ করে পিয়া বলে- কী গো? কী ভাবছ? শিঙাড়াটা ঠান্ডা হয়ে গেল যে। অফিসে কোনও সমস্যা হয়নি তো?
-আরে না না এই তো খাচ্ছি। টুকিটাকি কথার মধ্যেই ফোন বেজে ওঠে। ‘হ্যাঁ রে অরিত্র বলছিস তো? আমি জয়। কতদিন পর কথা হল বল তো? তুই এখন কোথায়? অনেক কথাই গড়গড় করে বলে যাচ্ছিল ঋতঞ্জয়। ফাঁক পেয়ে অরিত্র হাসতে হাসতে বলে- আমি ভালোই আছি, ঠিকঠাকই আছি, পিয়া এইমাত্রই তোর কথা বলছিল।
-তোর বৌ কী বলছিল আমি আন্দাজ করতে পারি। কিন্তু গ্রেট কৃত্তিবাস কী বলেছে তোকে?
-আমাকে! তুই কী করে জানলি?
ফোনের ওপার থেকে হো হো করে হেসে ওঠে জয়- কৃত্তিবাসকে কি আজও তুই চিনলি না! তোর সঙ্গে ওর যে দেখা হয়েছিল, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া যাবতীয় বিপর্যয়ের জন্য তুই যে খুব উদ্বিগ্ন, সে সব খবর আমার বাড়ি বয়ে ওই এসে দিয়ে গেছে। যাক গে, সে সব কথা, কাল তো রবিবার, ফ্রি আছিস নিশ্চয়ই, চলে আয় না বিকেলবেলা আমাদের পুরোনো আড্ডার জায়গায়?
গঙ্গার এই ধারটায় লোকজন একটু কম। গাছের তলার বেদিটা ঝেড়েঝুড়ে বেশ আরাম করে বসল দুজনে। পড়ন্ত এই বিকেলে সূর্যের আলো পড়েছে জলের শরীরে। তিরতির করে কাঁপছে রঙিন হয়ে ওঠা ছোট ছোট ঢেউগুলো। জলের গন্ধ মাখা ফুরফুরে বাতাসে ঠান্ডা হয়ে এল শরীর। জয়ের মেজাজটা যদি আজ ভালো থাকে তাহলে নৌকা নিয়ে ভেসে পড়া যায় সন্ধ্যায় সুন্দরী হয়ে ওঠা গঙ্গার বুকে। ডিঙি নৌকাটা যেন তাঁদেরই জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। জলের খেলা দেখতে দেখতে অরিত্রর মনে হয়, জয়ের সত্যিই কি কোনও সমস্যা আছে, নাকি কৃত্তিবাসের চালাকি ওটা, এমন সময় জয়-ই নীরবতা ভাঙে- চাপবি নাকি নৌকাটাতে? আজ সন্ধেটা বড় সুন্দর, একটু পরেই চাঁদ উঠবে। হাঁকডাক করতেই পাওয়া গেল মাঝিকে।
অরিত্র, তোর নিশ্চয়ই মনে আছে মণিদীপাকে। ওর প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল, সেটাও একমাত্র তুই জানতিস। বাড়ির অসচ্ছলতা আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অসম্ভব জেদ ওর মধ্যে তৈরি করেছিল একধরনের অহংকার আর ব্যক্তিত্ব। আমার মা কেন জানি না ওর সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই খেপে যেত আমার উপর। বাবা মারা যাবার পর সেই ঘ্যানঘেনেপনা বেড়েছিল আরও বেশি করে। কারণটা আমি বুঝেছিলাম পরে। আসলে বাবা যত টাকাপয়সা জমিয়েছিল, তার সবকিছুর মালিকানাই ছিল আমার। একসময় বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত মায়ের কাছে পেনশনটা ছাড়া আর কিছুই না থাকায় এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল মা।’
আমি অবাক হয়ে তাকাই জয়ের দিকে, ‘এর মধ্যে বিপদই বা কোথায়, আর মণিদীপাই বা আসছে কোথা থেকে?’ নৌকা তখন তীর ছেড়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে। জলের উপর বৈঠার আঘাত লেগে আওয়াজ উঠছে ছপছপ করে। জয় খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। আমি সেই নীরবতা ভাঙার কোনও চেষ্টা করি না। জেলে নৌকাগুলো সব বেরিয়ে পড়েছে মাছ ধরতে। ঘুরে বেড়ানো নৌকার ছোট ছোট আলোর টিপগুলো মিটমিট করে জ্বলছে জোনাকির মতো। সেইসঙ্গে শান্ত গঙ্গার জলে নরম রুপোলি জ্যোৎস্নার আদুরে মাখামাখি।
-মণিদীপা মেয়েটা অদ্ভুত জানিস? এত বড় একটা বিপদ হয়ে গেল, কাউকে কিছু জানাল না, কোনওরকমে নিজেই গিয়ে থানায় একটা ডায়েরি করে এসেছে। তারপর থেকে ঘরেই স্বেচ্ছাবন্দি। শরীর ও মনের যতটুকু চিকিৎসা চলছিল প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্যই। ততক্ষণে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় অরিত্রর কাছে। ‘তুই কেমন করে জানলি?’
-মার উপর রাগ করে আমি চলে গিয়েছিলাম বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই মার শরীরটা খারাপ ছিল। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল টাকাপয়সার। এই অজুহাতে মাও ডেকে পাঠায়, আমারও চলে আসা। তখনই সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে আমি গিয়েছিলাম মণিদীপার কাছে। বলেছিলাম, আমি তাকে বিয়ে করে যাবতীয় দায়দায়িত্ব নিতে রাজি। মণিদীপা স্বাভাবিকভাবেই এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিন্তু বিপদ বাঁধালেন আমার মা। তিনি বললেন, আমি যদি মণিদীপাকে বিয়ে করি তাহলে তিনি কেস ঠুকবেন এই বলে যে, আমি নাকি মাকে অত্যাচার করে বিষয়চ্যুত, গৃহহারা করতে চাইছি। – একদিন রাতে মাকে চেপে ধরলাম।
-‘তুমি সত্যিই কী চাও?’ – আমতা আমতা করে মা বলে, ‘তুই আমার ছেলে, তুই কিনা তোর বাবার কষ্টে জমানো সব টাকা দিয়ে দিবি কোথাকার কোন নষ্ট চরিত্রের মেয়ে, তাকে!’ –‘তাহলে তোমার টাকার দরকার? মণিদীপা যদি রাজি থাকে তাহলে আমি ওকে বিয়ে করবই। তোমার টাকা আমি ফিরিয়ে দেব, শর্ত এই যে, তুমি নিজে যাবে মণিদীপার বাড়িতে, তোমার ছেলের বৌ হিসাবে তাকে চাইতে।’ হ্যাঁ, মা গিয়েছিল পরের দিনই মণিদীপার বাড়ি।
দুজনেই চুপচাপ। মস্তিষ্কের কোষগুলো বিষয়বস্তুর ওজনে আর গভীরতায় কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। রাত অনেকটাই হয়েছে। মরা জ্যোৎস্নার আলো পড়ে চারদিক হয়ে রয়েছে অসম্ভব মায়াবী। আমি তাই দেখছি তাকিয়ে তাকিয়ে। না দেখেই বা কী করার আছে! জয় কিছু বলছে না, আমিও প্রত্যুত্তরে কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। নৌকা ফিরছে ঘাটের দিকে। ঘাটও তখন জনশূন্যই বলা চলে। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার ওপর চলে এলাম। এখন ফেরার জন্য একটা ট্যাক্সি পেলে ভালো হয়। কাছের সিগন্যালে গান বাজছে, ‘পাতার ভেলা ভাসাই, ভাসাই নীরে’। রিনরিনে গলায় রবীন্দ্রসংগীত। অন্যসময় অরিত্র বিরক্ত বোধ করে এই ধরনের গান যখন-তখন, যেখানে-সেখানে বাজার জন্য। কিন্তু এখন খারাপ লাগছে না, এখন ভারী হয়ে থাকা মনটায় সুরের প্রলেপ পড়ে হালকা করে দিচ্ছে। আড়চোখে তাকায় জয়ের দিকে- জয়েরও কি তাই!
নিস্তব্ধতা ভেঙে জয় বলল- ‘আজকের রাতটা যদি বাড়ি না ফিরে তোর কাছে থাকি! তোর বৌয়ের কি খুব আপত্তি হবে?’
-‘একেবারেই না, কিন্তু তোর মা…?’
– ‘আসলে কী জানিস, অনেক অনেকদিন পর আজ এমন একটা দিন পেয়েছি যেটা একান্তই আমার, বলা যায় স্বপ্নপূরণের দিন। অপরাধী ধরা পড়েছে। এভিডেন্স দিয়ে শক্ত আইনজীবী দিয়েছিলাম ছোকরার শাস্তির ব্যবস্থা যাতে করা যায় তার জন্য। জিজ্ঞেস করলি না তো মণিদীপার কী খবর?
– – ‘হ্যাঁ বল। সেটা শোনার জন্যই তো অপেক্ষা করে আছি। তবে আমি নিশ্চিত, তোর প্রশ্নের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে উত্তরটা। আমি কি তাই ঠিক ধরে নেব।’
– আগের মতোই গলাটা জড়িয়ে ধরে জয়, ‘আপাতত খবর, এই আয়োজন সম্পূর্ণ করতে মাসখানেক লাগবে, তারপর দীপাকে নিয়ে যাব বেঙ্গালুরুতে আমার কাছে।’
সূত্র: উত্তরবঙ্গ সংবাদ