সংক্ষিপ্ত অর্থ: প্রহার বা কঠোর শাস্তির ভয়ে অবাধ্যকে বাধ্য করা বা কঠিন কাজ আদায় করে নেওয়া। সোজা কথায়, পিটুনি দিলে বা ভয় দেখালে অসাধ্য সাধন হয়।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
১. মূল ভাব:
মানুষ সব সময় যুক্তিতে বা ভালো কথায় কাজ করে না। সমাজে এমন কিছু মানুষ বা পরিস্থিতি থাকে, যেখানে মিষ্টি কথায় কোনো ফল পাওয়া যায় না। তখন বলপ্রয়োগ, কঠোর শাসন বা প্রহারের আশ্রয় নিলে চটজলদি কাজ আদায় হয়। এই প্রবাদটি মূলত শক্তির দাপট বা কঠোর শাস্তির কার্যকারিতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
২. ‘ধনঞ্জয়’ শব্দের প্রাসঙ্গিকতা:
মহাভারতে পাণ্ডব অর্জুনের আরেক নাম ‘ধনঞ্জয়’। তিনি দিগ্বিজয় করে প্রচুর ধনসম্পদ আহরণ করেছিলেন বলে তাঁকে এই নামে ডাকা হতো। এই প্রবাদে ‘মার’ বা প্রহারকে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, অর্জুন যেমন যুদ্ধ করে ধন ও জয় ছিনিয়ে আনতেন, তেমনি ‘মার’ বা প্রহারের মাধ্যমেও কাঙ্ক্ষিত ফল বা স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া যায়। এখানে ‘মার’-কে বিজয়ী বা কার্যউদ্ধারকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
৩. ব্যবহারিক ক্ষেত্র:
সাধারণত নিচের পরিস্থিতিগুলোতে এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়:
অপরাধ স্বীকার করাতে: যখন কোনো চোর বা অপরাধী সহজে সত্য কথা স্বীকার করে না, কিন্তু পুলিশের ধমক বা প্রহারের ভয়ে গড়গড় করে সব বলে দেয়।
অবাধ্যকে বশে আনতে: কোনো একগুঁয়ে বা বেয়াদব ব্যক্তি যখন ভালো কথায় সোজা পথে আসে না, কিন্তু কড়া শাসনে সে নমনীয় হয়ে যায়।
পাওনা আদায়ে: কেউ টাকা ধার নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না, কিন্তু ভয়ভীতি দেখানোর পর দ্রুত টাকা ফেরত দিলে এই প্রবাদটি খাটে।
উদাহরণ:
“চোরটা প্রথমে কিছুতেই চুরির কথা স্বীকার করছিল না। কিন্তু পুলিশ যখন রিমান্ডে নিয়ে দু-চার ঘা দিল, তখন সে সব স্বীকার করল। একেই বলে—মারের নাম ধনঞ্জয়।”
আধুনিক দৃষ্টিকোণ:
যদিও প্রবাদটি সমাজে প্রচলিত, তবুও আধুনিক সভ্য সমাজে এর নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা কম। শারীরিক নির্যাতন বা বলপ্রয়োগ সব সময় সমস্যার সঠিক সমাধান নয়। এটি মূলত একটি ব্যঙ্গাত্মক বা কৌতুকপূর্ণ উক্তি হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়, যা মানুষের ভয়ের মনস্তত্ত্বকে নির্দেশ করে।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










