বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রস্তাবিত মার্জিন ঋণ বিধিমালা নিয়ে বাজারে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে অনেক শেয়ার নন-মার্জিন বা ঋণ অযোগ্য হয়ে পড়বে, যা বাজারে বিক্রির চাপ ও দরপতনের শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: শেয়ারবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি মার্জিন ঋণ সম্পর্কিত নতুন খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছে। জনমত যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত এ খসড়া নিয়ে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছে, খসড়াটি কার্যকর হলে অধিকাংশ শেয়ার মার্জিন ঋণ অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং ঋণ ব্যবসা সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি বাজারে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে।
বিএসইসি প্রকাশিত “Margin Rules (Repeal), 2025” খসড়ায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ সুবিধা পেতে হলে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত আয়ের প্রমাণ ও এক বছরের ট্রেডিং অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। এর ফলে ছাত্র, গৃহিণী ও অবসরপ্রাপ্তদের মতো আয়নির্ভরতা ছাড়া বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণের আওতাভুক্ত থাকবেন না। আগে আলোচনায় ন্যূনতম বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে কমিশন তা কমিয়ে ৫ লাখ করেছে।
নতুন প্রস্তাবে বিনিয়োগ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ইক্যুইটির সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। ১০ লাখ টাকার বেশি হলে ১:১ অনুপাতে ঋণ নেওয়া যাবে। এ শর্ত ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য কঠোর বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কেবলমাত্র এ-ক্যাটাগরির শেয়ারে মার্জিন ঋণ পাওয়া যাবে। বি বা জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে ঋণ সুবিধা থাকবে না। পাশাপাশি কোনো শেয়ারের ট্রেইলিং প্রাইস-আর্নিংস (P/E) অনুপাত ৩০ এর বেশি হলে সেটিও মার্জিন অযোগ্য হয়ে পড়বে। আগে এই সীমা ছিল ৪০। ফলে বাজারে থাকা অনেক শেয়ার নতুন নিয়মে ঋণযোগ্য তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এছাড়া ব্লক শেয়ার, লক-ইন শেয়ার, পরিচালক বা প্রমোটর সংশ্লিষ্ট শেয়ারও ঋণের বিপরীতে ব্যবহার করা যাবে না।
সবচেয়ে আলোচিত প্রস্তাব হলো, কোনো শেয়ার মার্জিনযোগ্য থেকে অযোগ্য হয়ে পড়লে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে। ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আশঙ্কা, এতে বাজারে হঠাৎ বড় বিক্রির চাপ তৈরি হবে এবং অনেক শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়বে। ফলে শেয়ারের দরপতন ঠেকানো কঠিন হয়ে উঠবে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাফফাত রেজা বলেন, মার্জিন ঋণ গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সমঝোতার বিষয়। এটিকে অযথা কঠোর আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলে বাজারে চাপ বাড়বে। তার মতে, পাঁচ দিনে বাধ্যতামূলক বিক্রির পরিবর্তে ছয় মাস বা এক বছর সময় দেওয়া হলে বাজারে স্থিতি বজায় থাকবে।
ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে খসড়ায় বলা হয়েছে, পোর্টফোলিওর মূল্য যদি ঋণের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে যায় তবে নোটিশ ছাড়াই বিক্রি করতে হবে। আর ১৭৫ শতাংশে নামলে গ্রাহককে নোটিশ দিতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে তিন দফায় সতর্ক বার্তা পাঠাতে হবে। প্রতিষ্ঠান এসব মানতে ব্যর্থ হলে ক্ষতির দায়ভার বহন করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক চেক, পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের অর্থ নগদায়ন নিশ্চিত না হলে মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
বাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতেই বিএসইসি এই খসড়া প্রণয়ন করেছে। এখন জনমত যাচাই শেষে চূড়ান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, কমিশন বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব বিবেচনা করে সময়সীমা কিছুটা শিথিল করবে এবং ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য ছাড় দেবে, যাতে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা তৈরি না হয়।