Home আন্তর্জাতিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও বহু সংস্কৃতির মিলনভূমি: মালয়েশিয়া

সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও বহু সংস্কৃতির মিলনভূমি: মালয়েশিয়া

ভূখণ্ডের গল্প, সীমানার ভাষা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যা দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত। একটি মূল ভূখণ্ড মালয় উপদ্বীপে এবং অপরটি বোর্নিও দ্বীপের উত্তরাংশে। এর ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, জাতিগত মিশ্রণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি একে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

মালয়েশিয়ার আয়তন ও সীমানা

আয়তন: মালয়েশিয়ার মোট আয়তন প্রায় ৩,৩০,৮০৩ বর্গকিলোমিটার। দেশটি দুটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত:

১. পশ্চিম মালয়েশিয়া (মালয় উপদ্বীপ) ২. পূর্ব মালয়েশিয়া (বোর্নিও দ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত সাবাহ ও সারাওয়াক রাজ্য)

সীমানা:

পশ্চিম মালয়েশিয়া:

  • উত্তর: থাইল্যান্ড
  • দক্ষিণ: সিঙ্গাপুর (জোহর প্রণালীর মাধ্যমে পৃথক)
  • পূর্ব: দক্ষিণ চীন সাগর
  • পশ্চিম: মালাক্কা প্রণালী ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা

পূর্ব মালয়েশিয়া:

  • উত্তর: দক্ষিণ চীন সাগর
  • দক্ষিণ ও পশ্চিম: ইন্দোনেশিয়ার কালিমানতান অঞ্চল
  • উত্তর-পূর্ব: ব্রুনেই (সাবাহ ও সারাওয়াকের মাঝে অবস্থিত)

এই দুটি অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা পৃথক হলেও একত্রে মালয়েশিয়া গঠন করে।

রাজধানী ও প্রধান শহর:
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর, যা দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক শহর। সরকারি প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য ‘পুত্রজায়া’ আলাদাভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।

জনসংখ্যা ও ভাষা:
মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ। এখানে মালয়, চীনা, ভারতীয় এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সরকারি ভাষা মালয় (বাহাসা মালায়ু), তবে ইংরেজি, ম্যান্ডারিন ও তামিল ভাষাও ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।

ধর্ম ও সংস্কৃতি:
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় ৬০ শতাংশ)। তবে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও চীনা ঐতিহ্যবাহী ধর্মাবলম্বীদের বসবাসও রয়েছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের কারণে মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহু উৎসব, ঐতিহ্য ও রঙিন সংস্কৃতি।

শাসনব্যবস্থা:
মালয়েশিয়া একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। দেশটির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—রাজা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নয়টি রাজ্যের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন। কার্যকরী শাসনব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর হাতে, যিনি সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন।

অর্থনীতি:
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি। পাম অয়েল, ইলেকট্রনিক্স, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পর্যটন খাত এর প্রধান চালিকাশক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি ও উৎপাদন শিল্পে দেশের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। কুয়ালালামপুর শহরটি একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়:
মালয়েশিয়া একসময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন ছিল। ১৯৫৭ সালে মালায় ফেডারেশন স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়া রাষ্ট্র গঠিত হয় (সিঙ্গাপুর প্রথমে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ১৯৬৫ সালে পৃথক হয়)। ব্রিটিশ প্রভাব, চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং ভারতীয় শ্রমিকের আগমন দেশের গঠন ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

পরিবেশ ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
দেশটিতে রয়েছে ঘন বনাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, সৈকত ও বহু দ্বীপ। জৈব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মালয়েশিয়া পরিবেশগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
মালয়েশিয়া আসিয়ান (ASEAN)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে এর গভীর বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, মালয়েশিয়া একটি বহু জাতিগোষ্ঠীর, বহু ধর্মের এবং বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এক অনন্য পরিচয় বহন করে।

সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে চোখ রাখুন businesstoday24.com