আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ববাসীর কাছে তিনি পরিচিত একজন সাহসী কিশোরী হিসেবে, যিনি মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার অপরাধে তালেবানের গুলির শিকার হয়েছিলেন। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসে তিনি হয়েছেন শান্তির নোবেলজয়ী। তবে সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে দেওয়া একটি পোস্টে মালালা ইউসুফজাই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু ‘একজন প্রতীক’ নন, একজন জীবন্ত, বাস্তব, হাসিমুখের তরুণীও।
মালালার ইনস্টাগ্রাম রিইনট্রোডাকশন পোস্ট শুরু হয়েছে অনেকটাই এভাবে: “যদি তুমি কোনো স্কুল প্রজেক্টে আমাকে নিয়ে কাজ করে থাকো, তাহলে হয়তো জানো, আমি সেই ১৫ বছর বয়সী মেয়েটি, যে তালেবানের গুলিতে আহত হয়েছিল, কারণ আমি মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম।” এরপরই শুরু হয় মালালার আত্মপ্রকাশ, সততা, রসবোধ আর আত্মিক সাহসের এক অসাধারণ সংমিশ্রণে।
তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সময় তার মানসিক স্বাস্থ্যের কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। “আমি কলেজে থাকাকালীন প্যানিক অ্যাটাকের অভিজ্ঞতা পাই। থেরাপিতে যাওয়া আমাকে অনেক সাহায্য করেছে,”, এই স্বীকারোক্তি শুধু একটি বাক্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে নীরবতা, তা ভাঙার সাহসী পদক্ষেপ।
বর্তমানে মালালা তার স্বামী আসার মালিকের সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করছেন। ২০২১ সালে বিয়ের পর তিনি নিজের অনেক নতুন দিক খুঁজে পেয়েছেন। যেমন তিনি এখন নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং খেলাধুলায় অংশ নেন। “আসার আমাকে বলে ‘জিম ব্রো’,”—এই মন্তব্য তার ভক্তদের মুখে হাসি এনে দেয়। কারণ আমরা এতদিন তাকে দেখেছি শুধুই গম্ভীর সামাজিক বার্তা দিতে, কিন্তু বাস্তবে তিনি অন্যদের মতোই হাসিখুশি একজন তরুণী।
আরও মজার ব্যাপার হলো মালালা একেবারেই রান্না করতে পারেন না! তিনি নিজেই বলেছেন, “আমার ফ্রিজ ভর্তি টেকআউট খাবারে। কিন্তু আমি নতুন রেস্টুরেন্ট আর খাবার ট্রাই করতে ভালোবাসি।” ভ্রমণেও আছে তার ভালোলাগা, যদিও তিনি স্বীকার করেছেন—ট্রিপের প্রস্তুতিতে তিনি ভীষণ অলস। “আমি প্রায়ই এয়ারপোর্টে যাওয়ার ১০ মিনিট আগে কাপড়চোপড় ছুঁড়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিই… আর কিছু না কিছু ভুলে যাই, প্রায়ই মোজা!”
এতসব কথার মধ্যেও মালালা তার মূল জীবনের কাজর মেয়েদের শিক্ষার অধিকারকে ভুলে যাননি। তিনি জানিয়েছেন, এখনো তিনি পৃথিবীর নানা দেশে আফগানিস্তান, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তানসহ নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার স্বপ্ন এখনো অটুট: “আমি চাই প্রতিটি মেয়ে স্কুলে যাক, নিজের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাক, নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নির্ধারণ করতে পারুক।”
এই নতুন ইনস্টাগ্রাম পোস্ট শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হালকা পোস্ট নয় এটি একটি বার্তা, একটি বিবৃতি। মালালা জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আর কেবল ‘গুলিবিদ্ধ মেয়েটি’ নন। তিনি একজন স্ত্রী, একজন জিমপ্রেমী তরুণী, একজন রান্না-অপটু খাদ্যরসিক, এবং একজন তরুণী যিনি কখনো মেকানিক হতে চেয়েছিলেন।
মালালার এই পুনঃপরিচয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বিশ্বজোড়া প্রতীকেরাও মানুষ। তাদের হাসি আছে, খুশি আছে, ব্যর্থতা আছে, এমনকি ভুলোমনও আছে। আমাদের সমাজে যাদের আমরা ‘আইকন’ হিসেবে দেখি, তারা কি শুধু মহৎ ও নিঃস্বার্থ কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নাকি তারাও আমাদের মতোই হাসে, কাঁদে, ভালোবাসে, ক্লান্ত হয়? এই প্রশ্নই তোলেন মালালা।
শেষ পর্যন্ত, মালালার এই উদ্যোগ এক ধরনের ‘ন্যারেটিভ রিক্লেম’ অর্থাৎ, তিনি নিজের গল্পটিকে আবার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন। তিনি শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকা নাম হয়ে থাকতে চান না, তিনি বর্তমান, জীবন্ত, সচল এক মানুষ—যার গল্পে এখন হাসি, খুনসুটি, ব্যর্থতা ও ভালোলাগার সমান জায়গা।
মালালার এই নতুন রূপ যদি আপনাকে ছুঁয়ে যায়, চোখ রাখুন businesstoday24.com-এ।