বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পূর্ব আফ্রিকার বিস্তীর্ণ সাভানা অঞ্চলে এমন এক জনগোষ্ঠী বাস করে যারা তাদের রঙিন পোশাক, অনন্য জীবনধারা এবং গভীর ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বে পৃথক পরিচিতি পেয়েছে। তারা হলো মাসাই। কেনিয়া ও তানজানিয়ার সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠী প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে জীবন কাটায়। তাদের সংস্কৃতি দেখলে মনে হয় সময় যেন সেখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
মাসাইদের জীবনযাপনের কেন্দ্রে আছে গবাদিপশু। বিশেষ করে গরু তাদের অর্থনীতি, ঐতিহ্য এবং সম্মানের প্রতীক। কোন পরিবার কতগুলো গরুর মালিক তা দিয়ে সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়। গরুর দুধ, দই এবং মাঝে মাঝে রক্ত তাদের খাদ্যসংস্কৃতির অংশ। গবাদিপশু রক্ষা করতে তারা অনেক পথ হেঁটে যায় এবং সাভানার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।
তাদের পোশাক শুকা নামে পরিচিত। লাল, নীল এবং চেক ডিজাইনের এই কাপড় তাদের স্বকীয়তা। গলায় ও হাতে পুঁতির রঙিন অলংকার তাদের সৌন্দর্য বাড়ায়। মেয়েরা এবং ছেলেরা উভয়েই এসব পণ্য তৈরি করে। মাসাইদের বিখ্যাত নাচ আদুমু আজও বিশ্বের আলোচনার বিষয়। যেখানে যুবকেরা উঁচু লাফ দিয়ে শক্তি, সহনশীলতা এবং সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শন করে।
তাদের বসবাসের ঘরবাড়ি মানইয়াটা নামে পরিচিত। এগুলো মাটি, কাঠ, ঘাস এবং গরুর গোবর দিয়ে তৈরি। বৃত্তাকার আঙিনা ঘিরে ছোট ছোট ঘর এবং মাঝখানে পশুর জন্য আলাদা জায়গা থাকে। এতে তাদের সম্প্রদায়বদ্ধতা ও নিরাপত্তাবোধ প্রতিফলিত হয়।
ধর্মীয় বিশ্বাসেও তারা প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। এনগাই নামের এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি তারা বিশ্বাসী। তাদের মতে এনগাইই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সব প্রাণের রক্ষক। বৃষ্টি, গবাদিপশু এবং ভূমির উর্বরতা তাদের কাছে পবিত্র।
আধুনিকতার প্রবল ঢেউয়ের মধ্যেও মাসাইরা নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। পর্যটনে তাদের প্রচুর গুরুত্ব রয়েছে। তাদের পোশাক, নাচ, কুটিরশিল্প এবং জীবনযাত্রা দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসে। এর মাধ্যমে তারা আয়ও করে, তবে তাদের স্বকীয়তাও টিকে থাকে।
মাসাই জনগোষ্ঠী শুধু একটি জাতিই নয়। তারা আফ্রিকার সাভানার প্রাণবন্ত কণ্ঠস্বর। প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং আত্মসম্মান তাদের জীবনের মূল ভিত্তি। পরিবর্তনশীল বিশ্বেও তারা মনে করিয়ে দেয় নিজের শিকড়কে আঁকড়ে থাকার মূল্য কতটা গভীর হতে পারে।










