বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি নেতা ও ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসহাক সরকারের চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের বলি হয়েছেন সোহাগ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিটফোর্ড এলাকায় চাঁদা তোলার নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি নেতা ইসহাক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রতি মাসে ছয় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সম্প্রতি চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ করে ১২ লাখ টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি দায়িত্বে রদবদল করেন। পুরনো আদায়কারী সোহাগকে সরিয়ে তাঁর স্থানে নিয়োগ দেন যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মহিনকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপে যোগ দিতে চেয়েছিলেন সোহাগ। সেই ‘অপরাধের’ শাস্তি হিসেবেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে হাসপাতালের সামনে ভয়ংকর কায়দায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা লাঠি, ইট-পাথর দিয়ে হামলা চালায় এবং মৃত্যুর পরও মৃতদেহের উপর পাথর নিক্ষেপ করে উল্লাস করে। চারপাশে শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
৪ জন গ্রেপ্তার, দলীয় শাস্তি
পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত যুবদল নেতা মহিনের পাঁচ দিনের এবং রবিনের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জের সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এজাহারে মোট ২০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
ঘটনার পরপরই বিএনপি যুবদল ও ছাত্রদলের অভিযুক্ত দুই নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা হলেন—রজ্জব আলী পিন্টু ও সাবাহ করিম লাকি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ এবং অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটা বর্বরতাকে ছাপিয়ে যাওয়া এক নির্মমতা, যা জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।” গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টিও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
চাঁদাবাজির নেপথ্য রাজনীতি
স্থানীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল, ওষুধ ব্যবসা ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণের নামে একটি রাজনৈতিক চক্র চাঁদাবাজি শুরু করে। সোহাগ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে শেষদিকে দলবদলের চেষ্টা তাঁকে চূড়ান্তভাবে বিপদের মুখে ফেলে দেয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী, অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং স্থানীয় বিএনপি নেতার আত্মীয়।
ঘটনাটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, বরং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংগঠিত রাজনীতির নামে চাঁদাবাজ চক্রের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
আজীবনের জন্য বহিষ্কার
ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদলের দুই নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। তাদের বিরুদ্ধে সোহাগের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।