আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী-সমর্থিত নতুন প্রশাসন ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড পিস কমিশন’ (এনএসপিসি) আবারও নাগরিকদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সুরক্ষা আইনটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ধারা স্থগিত করেছে। এর ফলে, আদালতের অনুমতি ছাড়াই বাড়িতে হানা, বাসিন্দাদের গ্রেপ্তার ও দীর্ঘ সময় আটকে রাখার মতো ক্ষমতা আবার ফিরিয়ে এনেছে শাসকগোষ্ঠী।
২০১৭ সালে গৃহীত এ আইনটি এতদিন সামরিক বাহিনীর নির্বিচার ধরপাকড় ও নজরদারির অবসান ঘটানোর প্রতীক ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ঘোষিত জরুরি অবস্থার সময় প্রথম এ তিনটি ধারা স্থগিত করা হয়। যদিও সম্প্রতি মিয়ানমারের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদ (এনডিএসসি) জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়, কিন্তু দেশটির শাসক মিন অং হ্লাইং—যিনি এখন ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি’ হিসেবেও ক্ষমতায়—তাৎক্ষণিকভাবে ওই ধারাগুলোর স্থগিতাদেশ আবার বহাল করেন।
কোন কোন ধারা স্থগিত হলো?
আইনের যেসব ধারা স্থগিত হয়েছে, তা হলো—
- ধারা ৫: আদালতের অনুমতি ছাড়া কাউকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখা যাবে না
- ধারা ৭: নাগরিকদের ফোন, ইন্টারনেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত যোগাযোগে নজরদারি করা যাবে না
- ধারা ৮: বাড়িতে তল্লাশি ও ব্যক্তিগত কাগজপত্র জব্দের জন্য আদালতের ওয়ারেন্ট আবশ্যক
নতুন করে এই ধারাগুলো স্থগিত করায় প্রশাসন এখন যেকোনো নাগরিকের বাড়িতে হানা দিতে, ফোনে আড়ি পাততে ও গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ সময় আটকে রাখতে সক্ষম।
বিরোধীরা বলছে—এটি আসন্ন নির্বাচনের আগে ‘দমননীতি’
ডিসেম্বরে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তা ইতিমধ্যেই পশ্চিমা গণতন্ত্রপন্থী দেশ ও মিয়ানমারের প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘প্রহসন’ বলে নিন্দিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের ভয়ভীতি ছড়াতেই সরকার এ আইনগত অস্ত্র ব্যবহার করছে।
সুশীল সমাজের ভাষ্যমতে, এটি কেবল ৬৩টি সামরিক শাসিত টাউনশিপেই নয়—যেসব এলাকায় নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব ২৬৭টি টাউনশিপেও কার্যত একই দমননীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আইনি বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
সামরিক অভ্যুত্থানের পর নাগরিক আন্দোলনে যোগ দেওয়া এক বিচারক কো মিন নাং খাইং বলেন, “এটা কেবল তিনটি ধারা স্থগিত করার প্রশ্ন নয়। এর মাধ্যমে সরকার নিজের ইচ্ছেমতো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করছে।”
প্রতিষ্ঠিত বিরোধী সংগঠন জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)-এর মুখপাত্র ইউ নে ফোন লাত জানান, “এই আইনের তিনটি ধারা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার ভিত্তি ছিল। এখন আবার কেউ নিরাপদ নয়—না ফোনে কথা বলার সময়, না নিজের ঘরে বসে থাকার সময়।”
মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ
মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে শাসকগোষ্ঠী এবং ৭ হাজারের বেশি সাধারণ নাগরিক তাদের দমননীতির শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, সেনা-সমর্থিত প্রশাসন নতুন নাম নিয়ে পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরে গেছে—আবারও ভয়ভীতি, দমনপীড়ন ও গোপন নজরদারির ছায়া ছড়িয়ে পড়ছে গোটা মিয়ানমারে।