Home আন্তর্জাতিক মিয়ানমারে জান্তার ‘প্রহসনের’ নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও গণবর্জন

মিয়ানমারে জান্তার ‘প্রহসনের’ নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও গণবর্জন

সংগৃহীত ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং-এর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত কথিত সাধারণ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে যে গণবর্জন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধের চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে জান্তার আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচনের দিন এবং তার আগের রাত থেকেই মিয়ানমারের প্রধান শহরগুলোতে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করে। মান্দালয় থেকে শুরু করে মায়াবতী পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিরোধ বাহিনীগুলো ড্রোন ও প্রজেক্টাইল হামলা চালায়। মান্দালয় হিল এবং রাজপ্রাসাদ চত্বরে জান্তা বাহিনীর ওপর চালানো হামলার জবাবে জান্তা সেনারা পাল্টা ভারী গোলাবর্ষণ করলে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হন।

কায়াহ রাজ্যের লোইকাও এবং সাগাইং অঞ্চলের কালয় এলাকায় জান্তা বাহিনীর বিমান ও ভারী অস্ত্রের হামলায় অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এই নির্বাচনকে একটি ‘ফাঁদ’ ও ‘অবৈধ প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এনইউজি প্রধানমন্ত্রী মান উইন খাইং থান এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই প্রহসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

নির্বাচনের দিন শান রাজ্যের লাশিও এবং কারেন রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ের মতো প্রধান শহরগুলোর পোলিং স্টেশনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। অনেক জায়গায় ভোটার না থাকায় জান্তা সমর্থিত স্থানীয় প্রশাসন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের ভোট দিতে বাধ্য করে এবং অনেককে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। কালয় ও অন্যান্য কিছু শহরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ‘সাইলেন্ট স্ট্রাইক’ বা নীরব ধর্মঘটের ফলে রাস্তাঘাট জনশূন্য ছিল। ইয়াঙ্গুনের সুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও বিদেশি সংবাদকর্মীরা দিনভর ভোটারদের জন্য অপেক্ষা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই নির্বাচন ফাটল ধরিয়েছে। সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (NLD) তাদের দলের ৯ জন সদস্যকে বহিষ্কার করেছে যারা দলের নীতি ভঙ্গ করে জান্তার এই প্রক্রিয়ায় শরিক হয়েছিল। জান্তা সমর্থিত ইউএসডিপি (USDP) অনেক স্থানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এবং এমনকি অনেক জায়গায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করতে বিলম্ব করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জান্তার এই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অবৈধ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

জাপানে অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাস এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মে ১৮ মেমোরিয়াল হলের সামনে প্রবাসী মিয়ানমার নাগরিকরা এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সব মিলিয়ে, ২০২০ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটকেন্দ্রে সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি কমে যাওয়া এবং দেশজুড়ে সশস্ত্র সংঘাতের বিস্তার প্রমাণ করে যে, সামরিক জান্তা মিয়ানমারের অধিকাংশ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

এই নির্বাচন রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পরিবর্তে দেশটিকে এক অনিশ্চিত ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।