বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আজ ১২ই রবিউল আউয়াল। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এই দিনটি অগাধ মহিমা ও শ্রদ্ধার দিন। কারণ, হিজরি ৫৭০ সনে আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে মানবতার ত্রাণকর্তা, সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। আবার ৬৩ বছর পর একই দিনে তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেন। তাই এ দিনটি যেমন আনন্দের, তেমনি শোক ও স্মৃতির আবহে ভরপুর। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর এই দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে।
বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি । ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র আজকের দিনকে কেন্দ্র করে শোভাযাত্রা, জশনে জুলুস ও ধর্মীয় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব ছিল মানবজাতির জন্য এক অলৌকিক কল্যাণ। অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোত্রীয় হানাহানি ও পৈশাচিকতায় নিমজ্জিত ‘আইয়্যামে জাহেলিয়াত’-এর অন্ধকার যুগে তিনি এসেছিলেন আলোর প্রদীপ হয়ে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেছেন—
“আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি” (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)।
তিনি শুধু আরবের নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানুষের মুক্তির দিশা দেখিয়েছেন। তাঁর জীবন ছিল ন্যায়, দয়া, সাম্য ও কল্যাণের অফুরন্ত ভাণ্ডার। তাই তাঁকে বলা হয় সাইয়্যিদুল মুরসালিন—সকল নবী-রাসুলের নেতা।
মুসলিম বিশ্বেই নয়, ভিন্ন ধর্মের গবেষক ও চিন্তাবিদরাও মহানবী (সা.)-কে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী খ্যাতনামা গবেষক মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর বিশ্ববিখ্যাত দ্য হান্ড্রেড গ্রন্থে হযরত মুহম্মদ (সা.)-কে মানবজাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেছেন—
“মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহ আজকের এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথনির্দেশক।”
তিনি আরও বলেন—“ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবীর সুন্নাহ ও শিক্ষা বিশ্বমানবতার জন্য সর্বোত্তম অনুসরণীয়। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুসলমানদের অফুরন্ত শান্তি, সফলতা ও মুক্তি।”
আলোর দিশারী
পবিত্র কোরআনে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-কে বলা হয়েছে ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’—সুন্দরতম আদর্শ। তিনি ছিলেন ‘সিরাজাম মুনিরা’—আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ, যিনি অন্যায়, অবিচার, দাসত্ব ও অন্ধকার থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে শান্তি, প্রগতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।
আজকের এই মহিমান্বিত দিনে প্রতিটি মুসলমানের উচিত মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়ন করা। তাঁর সত্য, ন্যায়, করুণা, ধৈর্য ও মানবপ্রেমই হতে পারে আমাদের আত্মিক মুক্তি এবং বিশ্বশান্তির একমাত্র ভরসা।