আজিজার রহমান, খানসামা ( দিনাজপুর ): খানসামা উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষায় শিক্ষকদের মাধ্যমে ব্ল্যাকবোর্ডে সরাসরি উত্তর লিখে দেওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর অভিভাবক ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর স্থানীয়ভাবে শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
গত সোমবার (১৩ মে) দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গণিত বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষকরা সরাসরি বোর্ডে প্রশ্নের উত্তর লিখে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে নিজের খাতায় টুকে নিচ্ছে। এভাবে পরীক্ষার আয়োজন যে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে—তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।
পরিচিত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—উত্তর টংগুয়া দাতাকর্ণ, মাদার পীর, মধ্য জাহাঙ্গীরপুর, তেবাড়িয়া, সুবর্ণখুলি ওকরাবাড়ি, সুবর্ণখুলি, উত্তর ভেড়ভেড়ী ও ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাকক্ষে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক এই অনৈতিক কাজে অংশ নিয়েছেন।
একজন অভিভাবক, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “শিক্ষক যদি পরীক্ষার সময় উত্তর লিখে দেন, তাহলে শিশুদের শেখার কিছুই থাকছে না। এ প্রবণতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
সুবর্ণখুলি ওকরাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা বেগম জানান, “আমি সেদিন বিদ্যালয়ে ছিলাম না, বিষয়টি আমার জানা নেই।” তবে বিষয়টি যেহেতু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে ঘটেছে, তার দায় এড়ানো কতটা গ্রহণযোগ্য—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
খানসামা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম রোধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই যদি অনিয়ম ও অসততা ঢুকে পড়ে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে তার প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ওপর। তারা দ্রুত ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক পরীক্ষাব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।