সরকারের বিশেষ উদ্যোগ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে অন্যতম শীর্ষস্থানে থাকলেও সামুদ্রিক মাছ চাষ বা ‘মেরিকালচার’-এ এতদিন পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে বিশাল সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর ‘ব্লু-ইকোনমি’ বা সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার এখন মেরিকালচারের ওপর জোর দিচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং জাতীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে নেওয়া হয়েছে বহুমুখী পরিকল্পনা।

মেরিকালচার কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মেরিকালচার হলো সমুদ্রের নোনা পানিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর চাষ। এটি সমুদ্রের উন্মুক্ত স্থানে খাঁচায় (Cage Culture), উপকূলীয় পুকুরে বা ট্যাংকে করা হয়। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ধরা এখন আর টেকসই সমাধান নয়। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এখন চাষের মাধ্যমে সামুদ্রিক মাছ উৎপাদন বাড়াতে চাইছে।
সরকারি উদ্যোগ ও গবেষণা
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ইতোমধ্যে মেরিকালচার নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। কক্সবাজারের খুরুশকুল, চৌফোলদণ্ডি এবং ইনানি উপকূলে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদ চাষ করা হচ্ছে।
সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. প্রজাতি নির্বাচন ও প্রজনন: ভেটকি (কোরাল), পারশে, নোনা ট্যাংরা এবং পম্পানো মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য এসেছে।
২. অপ্রচলিত জলজ পণ্য: মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া, কুচিয়া, ঝিনুক (অয়েস্টার) এবং সি-উইড (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষে উপকূলীয় চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
৩. পলিসি সহায়তা: জাতীয় মৎস্য নীতিতে মেরিকালচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে সহজ শর্তে ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সম্ভাবনা ও অর্থনীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা এবং ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি উপকূলীয় এলাকা মেরিকালচারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে বিশ্ববাজারে সামুদ্রিক শৈবাল, কাঁকড়া এবং খোলসযুক্ত প্রাণীর (Shellfish) ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে, “আমরা যদি পরিকল্পিতভাবে মেরিকালচার সম্প্রসারণ করতে পারি, তবে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এটি তৈরি পোশাক শিল্পের মতোই বড় রপ্তানি খাত হতে পারে। বিশেষ করে সি-উইড ও কাঁকড়া রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।”










