নপুংসক প্রহরী ও হেরেমের নিরাপত্তা
আমিরুল মোমেনিন:
মোঘল হেরেম ছিল বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন এক রাজপ্রাসাদ। সেই আভিজাত্যপূর্ণ আড়াল রক্ষা করত এক বিশেষ শ্রেণির প্রহরী—নপুংসকরা। কিন্তু তাঁদের ভূমিকা কি শুধু পাহারাদারিত্বে সীমাবদ্ধ ছিল? না কি সেই ছায়ার ভিতরেও ছিল ক্ষমতা, দ্বন্দ্ব আর ভয়?
❖ নপুংসক প্রহরীদের আবির্ভাব
মোঘল সাম্রাজ্যে হেরেমের প্রবেশাধিকার ছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। নারী ও সম্রাট ছাড়া কোনো পুরুষের প্রবেশ ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই নিয়ম কার্যকর রাখতে প্রহরী হিসেবে নিযুক্ত হতো নপুংসকদের—যাঁদের দেহে পুরুষত্বের কোনো বৈশিষ্ট্য থাকত না।
এই নপুংসকরা অনেক সময় কিশোর অবস্থায় বন্দি বা দাস হিসেবে রাজ্যে আসত। বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁদের ‘অসক্ষম’ করা হতো। তারপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হতো হেরেমের নিরাপত্তায়।
❖ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির কৌশল
হেরেমে প্রবেশ করবার প্রতিটি পথ ছিল দুই স্তরে রক্ষিত। বাইরের অংশে মোঘল সৈন্য, ভেতরের অংশে নপুংসক প্রহরীরা থাকত। তাঁদের কাজ ছিল—
- নারীদের বাইরে যাওয়া সীমিত রাখা
- কেবল অনুমোদিত গৃহপরিচারকদের যাতায়াত নিশ্চিত করা
- গোপন বার্তা বা অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহ হলেই তা জাহাঙ্গীর বা শাসকগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছে দেওয়া
নপুংসকরা এই নিরব ভূমিকার মধ্যেও কিছু ক্ষেত্রে দখল করেছিল বিপুল ক্ষমতা। অনেক সময় দেখা গেছে, সম্রাজ্ঞী বা প্রিয় বেগমদের হয়ে তারা রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি বাদশাহর কানে খবর পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতার জন্য তাঁদের অনেকেই হয়ে ওঠে ভয়ানক কূটনীতিক।
❖ নির্মম পরিণতি ও সন্দেহের দৃষ্টি
যদিও তাঁদের ছিল বিশেষ অধিকার, নপুংসক প্রহরীরা কখনোই সামাজিক মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। তাঁদের দিকে চেয়ে থাকত সন্দেহ, ঘৃণা ও ভয়। অনেক সময় ভুল সন্দেহে তাঁদের নির্মম শাস্তি দেওয়া হতো—নির্বাসন, বেত্রাঘাত কিংবা মৃত্যুদণ্ডও।
তবুও হেরেমের এই ছায়াপথের নিরব সৈনিকদের ছাড়া সেই নিখুঁত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনোই সম্ভব হতো না। তাঁদের নিয়েই গড়ে উঠেছিল ‘অদৃশ্য প্রাচীর’—যা মোঘল নারীদের জন্য ছিল অন্তরালের নিরাপত্তা, আবার একইসঙ্গে বন্দিত্ব।
🏰 হেরেম শুধু বিলাসিতা, প্রেম ও শিল্পের কেন্দ্র ছিল না—ছিল এক কঠোর শৃঙ্খলার জেলখানাও। নপুংসক প্রহরীরা সেই প্রাচীরের রক্ষক ছিল, আবার ছিল ক্ষমতা ও ভয়াবহ পরিণতির চিত্র।
👉 আপনি যদি পুরো সিরিজটি মিস করে থাকেন, বিজনেসটুডে২৪.কম-এ ফিরে পড়ুন মোঘল হেরেমের অন্তরালের ৫টি রুদ্ধশ্বাস পর্ব।
📌 আরও ঐতিহাসিক ধারাবাহিক পড়তে চোখ রাখুন প্রতিদিন।