বাংলাদেশসহ জনবহুল অনেক দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানি; বিশেষজ্ঞরা দেখছেন আইন, সচেতনতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: প্রতিদিনই ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের অন্তত ৩৮ শতাংশই ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী। এ সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে মোটরসাইকেলের এই আধিপত্য এবং তার বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না থাকায় এই দুই চাকার যান এখন যেন সড়কের ত্রাসে পরিণত হয়েছে।
কেন ভয়াবহ হচ্ছে মোটরসাইকেল?
বাংলাদেশে গত এক দশকে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। ২০১৩ সালে যেখানে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ, ২০২৪ সালের শুরুতে তা অতিক্রম করেছে ৭০ লাখের ঘর। অথচ চালকদের অধিকাংশই প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতা অত্যন্ত কম। রাস্তায় পর্যাপ্ত সংকেত, আলাদা লেন কিংবা নিরাপদ চালনার পরিবেশেরও ঘাটতি আছে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “যে হারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে, তা রীতিমতো গণস্বাস্থ্য হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। চালকদের মধ্যে সচেতনতা নেই, আইনের প্রয়োগ দুর্বল সব মিলিয়ে এটি এখন জাতীয় সংকট।”
আন্তর্জাতিক তুলনায় আমরা কোথায়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত বেশি। তবে এসব দেশে সরকার কর্তৃক কঠোর আইন, ইলেকট্রনিক নজরদারি এবং চালক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করায় ধীরে ধীরে মৃত্যু হার কমছে।
থাইল্যান্ডে ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ৭৪.৪, ভিয়েতনামে ২৬.৪। ভারতে প্রতি বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রায় ১ লক্ষাধিক মানুষ।
বাংলাদেশে প্রতি লাখে মৃত্যুর নির্ভুল সরকারি পরিসংখ্যান নেই, তবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও আরটিআইবি-র তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত এক-তৃতীয়াংশ এখন শুধুই মোটরসাইকেলজনিত।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদেরে মতে “বাংলাদেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো পুরনো নিয়মে চলছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপের কারণে অনভিজ্ঞ চালকরা হঠাৎ করেই রাস্তায় নেমে পড়ছে। ফিটনেসবিহীন বাইক, হেলমেটবিহীন চালক আর যাত্রী এই সব মিলিয়ে ঝুঁকি চরমে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপত্তা পরামর্শক ড. লিন ট্যান মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশে যদি এখনই মোটরসাইকেলের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে নীতিগত সংস্কার না আনা হয়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে দুর্ঘটনার হার দ্বিগুণ হতে পারে।”
কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞরা যেসব পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন, তা হলো—
- মোটরসাইকেল চালকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স যাচাই
- ট্রাফিক পুলিশের প্রযুক্তিনির্ভর তৎপরতা
- ফিটনেসবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা
- গণমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি
- সড়ক নিরাপত্তা আইন দ্রুত বাস্তবায়ন
সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো কঠোর আইন ও অবকাঠামো না থাকলে বাংলাদেশে মৃত্যুর মিছিল আরও ভয়াবহ হবে।
♦আপনার এলাকাতেও কি নিয়ম ভেঙে চলছে মোটরসাইকেল? আমাদের জানান নিচের মন্তব্যে। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।