Home আন্তর্জাতিক সৌদি আরবে বিরল অস্ত্রোপচার: যমজ যারা ও লারার সফল বিভাজন

সৌদি আরবে বিরল অস্ত্রোপচার: যমজ যারা ও লারার সফল বিভাজন

ছবি: এ আই

 ৩৮ বিশেষজ্ঞ, টেকনিশিয়ান, নার্স, ১৫ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে নতুন ইতিহাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ স্পেশালিস্ট চিলড্রেন’স হাসপাতালে দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলভাবে বিভাজন করা হয়েছে সাত মাস বয়সী যমজ শিশু যারা ও লারাকে। নীচের পেট ও পেলভিস অংশে যুক্ত থাকলেও উভয়ের পৃথক হাত-পা ছিল। তবে শারীরিকভাবে ভাগাভাগি করে নিচ্ছিল কিছু অভ্যন্তরীণ অঙ্গ।

এই অপারেশনটি ছিল সৌদি কোন্জয়েনড টুইনস প্রোগ্রামের ৬৫তম এবং ৩৫ বছরের ইতিহাসে অন্যতম জটিল একটি ঘটনা।

শিশুদের পিতা মুয়াইদ আল-শেহরি বলেন, “শিশুদের আলাদা হওয়ার পর আমাদের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একেবারে ভিন্নধরনের সুখ।”
তিনি আরও বলেন, “যখন চিকিৎসকেরা জানালেন আলাদা করা সম্ভব, তখন আমাদের মনে একটুও দ্বিধা ছিল না। এটা এক অনন্য মুহূর্ত।”

সৌদি সরকারের উপদেষ্টা এবং কোন্জয়েনড টুইনস প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল-রাবিয়াহ জানান, অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সংকীর্ণ স্থানে অত্যন্ত জটিল শারীরিক গঠন নিয়ে কাজ করা।
তিনি বলেন, “এখানে সংযুক্ত রেকটাম, মূত্রাশয়ের অংশ সব একসাথে। এই ধরনের অস্ত্রোপচারে ৩৮ জন বিশেষজ্ঞ, টেকনিশিয়ান, নার্স ও পরামর্শদাতা কাজ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ হয় না। অস্ত্রোপচারের পর শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রেখে সুস্থ করে তুলতে হবে। তারপর চলবে পুনর্বাসন ও ফিজিওথেরাপির দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যাতে তারা স্বাধীনভাবে বসতে, হাঁটতে ও খেলতে পারে।”

এই সাফল্যকে সৌদি ভিশন ২০৩০ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে তিনি বলেন, “বিশ্বের জটিলতম এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করছি সৌদি আরব এখন শুধু উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থাই গড়ে তুলছে না, বরং নিজেদের দক্ষ তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে।”

অপরদিকে, হাসপাতালের সামাজিক কর্মী দোররাহ আলসাদুন জানান, এই ধরনের অপারেশনে পরিবারকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“ভয়, দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে মানসিক সহায়তা অপরিহার্য। অপারেশনের আগে ও পরে অভিভাবকদের পাশে থেকে তাঁদের মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করি,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, অপারেশনের পরেও পরিবার ও যমজদের জন্য চালু থাকবে বিশেষ মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসন সহায়তা।

“শিশুদের নিজেদের শরীরের নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, আত্মপরিচয় গঠন এবং স্বাধীন চলাফেরার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি যত্ন ও উৎসাহ। আমরা সেটাই নিশ্চিত করি,” বলেন দোররাহ।