এভিয়েশন ডেস্ক: রাজস্থানের চুরু জেলার ভানুড়া গ্রামে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি জাগুয়ার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে সুরতগড় বিমানঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনে উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই পাইলটের প্রাণহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উদ্ধারকাজে অংশ নেয় একটি হেলিকপ্টার। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুই পাইলটের দেহাবশেষ বলে ধারণা করা কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিমানে থাকা দুজনই প্রশিক্ষণরত পাইলট ছিলেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে একটি কোর্ট অব ইনকোয়ারি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে অম্বালা ও পঞ্চকুলা সীমান্ত এলাকায় একটি জাগুয়ার বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই ঘটনায় পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও, এপ্রিল মাসে গুজরাটের জামনগরে আরেকটি জাগুয়ার বিধ্বস্ত হলে একজন পাইলট নিহত হন। এ নিয়ে চলতি বছরের মধ্যে তিন মাসের ব্যবধানে তৃতীয়বারের মতো এই মডেলের বিমান দুর্ঘটনায় পড়ল।
জাগুয়ার যুদ্ধবিমানগুলো প্রথমবার ভারতীয় বাহিনীর বহরে যুক্ত হয় ১৯৭৯ সালে। বর্তমানে এগুলো পুরনো হয়ে গেলেও ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৮ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে এই বিমানগুলো ধাপে ধাপে অবসরে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আধুনিক যুদ্ধবিমানের ঘাটতি এবং প্রতিস্থাপনের ধীরগতির কারণে এখনো পুরনো এসব বিমান দিয়ে চালানো হচ্ছে রুটিন প্রশিক্ষণ মিশন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার এই মডেলের বিমান দুর্ঘটনায় পড়া ভারতের সামরিক প্রস্তুতি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিঘ্নই ঘটায় না, বরং প্রতিরক্ষা বাজেটে অতিরিক্ত ব্যয় চাপিয়ে দেয়। পাইলট প্রশিক্ষণ, বিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ, এবং মেরামতের খরচ বেড়ে যায় বহুগুণে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনগণ ও সংবাদমাধ্যমকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতে নিষেধ করা হয়। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ভারতীয় বিমানবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ২০টির মতো জাগুয়ার যুদ্ধবিমান সচল রয়েছে। তবে প্রতিটি বিমানের বয়স ৪০ বছরের ওপরে, যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অত্যন্ত পুরনো। এর পরিবর্তে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস (Tejas) বিমান চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তার অগ্রগতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটি বা উড্ডয়নের সময়ই কিছু গঠনগত সমস্যা দেখা দেয়, যা পাইলটদের জীবন বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়নি।