Home আইন-আদালত প্রশাসনিক ভুলে কারামুক্ত যৌন অপরাধী: মুক্তি ঘিরে তোলপাড়

প্রশাসনিক ভুলে কারামুক্ত যৌন অপরাধী: মুক্তি ঘিরে তোলপাড়

ছবি সংগৃহীত
আজহার মুনিম, লন্ডন: প্রশাসনিক মারাত্মক ভুলে যুক্তরাজ্যে আটক এক যৌন অপরাধী আশ্রয়প্রার্থীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর তা দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ইথিওপীয় নাগরিক হাদুশ কেবাতু (৩৮)। তিনি নৌকায় করে ব্রিটেনে এসে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। সম্প্রতি ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। সাজা শেষে তাকে অবিলম্বে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু মানবিক ত্রুটির কারণে কেবাতুকে ভুলবশত মুক্তি দেওয়া হয় এসেক্সের চেল্মসফোর্ড কারাগার থেকে।

কারাগার কর্তৃপক্ষের ভুল শ্রেণিবিন্যাসের কারণে তাকে সাধারণ বন্দি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং মুক্তি দেওয়ার সময় হাতে দেওয়া হয় ৭৬ পাউন্ড স্টাইপেন্ড। আর তা  দিয়ে সপ্তাহখানেক খরচ চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। মুক্তির পর চেল্মসফোর্ড শহরের রাস্তায় ধূসর রঙের কারাগারের পোশাকে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। এক নাগরিক তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এসেক্স পুলিশ নিশ্চিত করেছে, মুক্তি পাওয়ার পর কেবাতু দুপুর ১২টা ৪১ মিনিটে চেল্মসফোর্ড রেলস্টেশন থেকে লন্ডনগামী ট্রেনে ওঠেন এবং লন্ডন লিভারপুল স্টেশনে পৌঁছান বিকেল ১টা ১৮ মিনিটে।

বিচার বিভাগীয় এক সূত্র ঘটনাটিকে বর্ণনা করেছেন “অবিশ্বাস্য প্রশাসনিক বিপর্যয়” হিসেবে। ভুল মুক্তির অনুমোদন দেওয়া কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারের জন্য নতুন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন আগেই ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো এক অভিবাসী আবার ছোট নৌকায় ফিরে এসেছিলেন ব্রিটেনে।

বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “এই ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ এবং জনসাধারণের পক্ষে অত্যন্ত হতাশ। কেবাতুকে অবিলম্বে আটক ও ইথিওপিয়ায় ফেরত পাঠানো উচিত।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ভুলের কোনো অজুহাত নেই, তবে আগের টরি সরকারগুলো যে ভঙ্গুর কারাগার ব্যবস্থা রেখে গেছে, সেটিই এর মূল কারণ।”

এদিকে কিয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “এই মুক্তি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তদন্ত চলছে, এবং পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্বে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এই ব্যক্তিকে অবশ্যই আটক করে তার অপরাধের জন্য বহিষ্কার করতে হবে।”

লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি মেরি গোল্ডম্যান দ্রুত জনসম্মুখে তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, “এটি চেল্মসফোর্ডের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি। কীভাবে এমন ভুল হলো তা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।”

কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনোক বলেন, “এটি এক অদক্ষতা যা বিশ্বাসের বাইরে। এমন অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া মানে জনগণকে বিপদে ফেলা।”

শেডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপও এই ঘটনায় লেবার সরকারের “চরম অযোগ্যতা”র অভিযোগ তুলেছেন।

ঘটনার পর শুক্রবার রাতে চেল্মসফোর্ড কারাগারে হাজির হন যৌন নিপীড়নের শিকার কিশোরীর বাবা। তিনি বলেন, “বিচারব্যবস্থা আমাদের সম্পূর্ণভাবে হতাশ করেছে। এমন অপরাধী কিভাবে মুক্তি পায়, তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।”

প্রিজন সার্ভিস জানিয়েছে, “আমরা জরুরি ভিত্তিতে পুলিশকে সহায়তা করছি ওই ব্যক্তিকে পুনরায় আটক করতে। জননিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”

হাদুশ কেবাতুকে মাত্র চার সপ্তাহ আগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। নতুন আইনের ফলে বিদেশি অপরাধীদের সাজা অর্ধেক ভোগের আগেই ফেরত পাঠানো যায়, এবং তার ক্ষেত্রেও সেই বিধান কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে এক গুরুতর যৌন অপরাধী এখন লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ইতোমধ্যে চেল্মসফোর্ড ও এপিং এলাকায় নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, যেখানে কেবাতু আগে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে বেল হোটেলে অবস্থান করতেন। স্থানীয়রা সরকারের কঠোর জবাবদিহিতা দাবি করছে।

পুলিশ জানিয়েছে, “আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এই অপরাধীকে পুনরায় আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছি।” তদন্ত এখনও চলছে এবং ঘটনাটিকে যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম গুরুতর প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।