Home Third Lead রক্তে সিসার ছায়া: বাংলাদেশ কেন বিশ্বে চতুর্থ

রক্তে সিসার ছায়া: বাংলাদেশ কেন বিশ্বে চতুর্থ

ছবি: এ আই
আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে মারাত্মক হুমকিগুলোর একটি হয়ে উঠেছে সিসা দূষণ। ইউনিসেফ ও ‘পিওর আর্থ’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক যৌথ গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, সিসা দূষণের কারণে বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে।

সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। দেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবনধারণ করছে। এই চিত্র শুধু উদ্বেগজনক নয়, এক ধরণের জাতীয় সংকেত।

বাংলাদেশে সিসা দূষণের মূল উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অননুমোদিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারি রিসাইক্লিং কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ব্যাটারি কারখানা ও স্ক্র্যাপ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে যেগুলোর বেশির ভাগই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই পরিচালিত হয়। এইসব কারখানায় সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই পুরনো ব্যাটারি ভেঙে সিসা আহরণ করা হয়। বাতাসে, মাটিতে এবং পানিতে মিশে যাওয়া এই সিসা ধাতু সরাসরি মানুষ এবং শিশুর দেহে প্রবেশ করে।

শুধু কারখানা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত রং, খেলনা, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং রান্নার বাসনেও সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

ঢাকার একটি জনস্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর শিশুরা অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রায় সিসার সংস্পর্শে আসে। কারণ, এসব এলাকায় সাধারণত নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করে এবং তাদের আশপাশে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার ঘনত্ব বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে গড়ে ৬০ থেকে ৯০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি বলছে, ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা থাকলে সেটি বিপদসংকেত।

শুধু শহরেই নয়, বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলেও পুরনো ব্যাটারি বা রঙ ব্যবহারজনিত কারণে সিসা দূষণ ছড়াচ্ছে। কুমিল্লা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলে বিশেষ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে শিশুদের মধ্যে সিসা দূষণের মাত্রা গড়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যার গভীরতা এতটাই বেশি যে শুধু আইন করে বা কিছু কারখানা বন্ধ করে তা সমাধান সম্ভব নয়। দরকার জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত নীতি, ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম এবং সিসা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে শিশুর রক্তে নিয়মিত সিসা পরীক্ষার কোনো সরকারি উদ্যোগ গৃহীত হয়নি।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার অভাব। সিসা যে শিশুদের বুদ্ধি ও আচরণে প্রভাব ফেলে, তা অনেক বাবা-মা জানেন না। অনেকেই জানেন না তাদের ব্যবহার করা রান্নার পাত্র বা শিশুর খেলনাতেও সিসা থাকতে পারে।

বাংলাদেশের এই ভয়াবহ অবস্থান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক ধরণের অদৃশ্য স্বাস্থ্য দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখনই সময় রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার সবাই মিলে এই বিষাক্ত বিপদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার।


📢 আপনার সচেতনতা অন্যকেও সচেতন করতে পারে। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করুন। শিশুদের রক্ষায় আমরা একসঙ্গে এগিয়ে চলি।