নবকুমার ও দুধকুমার” চট্টগ্রামের লোকসাহিত্যের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং রোমাঞ্চকর উপকথা। এই কাহিনির বিস্তারিত সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
এক দেশে এক রাজা ছিলেন যার কোনো সন্তান ছিল না। অনেক সাধনার পর রাজার দুই রানি দুই পুত্রের জন্ম দেন। বড় রানির ছেলের নাম রাখা হয় নবকুমার এবং ছোট রানির ছেলের নাম দুধকুমার। দুই ভাই অত্যন্ত সাহসী এবং একে অপরের পরম অনুগত ছিল। তারা যখন বড় হলো, তখন পৃথিবী দেখার নেশায় অজানার উদ্দেশ্যে শিকারে বের হয়।
শিকারে গিয়ে বনের গভীরে তারা লক্ষ্য করে যে, একের পর এক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে এবং বনের পশুরা ভয়ে অস্থির। তারা বুঝতে পারে এখানে কোনো অশুভ শক্তি রয়েছে।
অনুসন্ধানে গিয়ে তারা এক বৃদ্ধার দেখা পায়, যে আসলে ছদ্মবেশী এক রাক্ষস। রাক্ষসটি ওই অঞ্চলের মানুষকে ধরে খেয়ে ফেলত এবং তার মায়াবী শক্তির জোরে সবাইকে বিভ্রান্ত করে রাখত।
রাক্ষসটি দুই ভাইকে দেখে প্রলুব্ধ হয় এবং তাদের বন্দী করার চেষ্টা করে। কিন্তু নবকুমার এবং দুধকুমার তাদের যুদ্ধবিদ্যা এবং বুদ্ধির জোরে রাক্ষসের আক্রমণ প্রতিহত করে।
কাহিনির একটি পর্যায়ে দেখা যায়, রাক্ষসটি তার প্রাণ এক জাদুকরী কৌটোর ভেতর ভ্রমরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে (বাংলার লোককথার চিরচেনা মোটিফ)।
দুই ভাই দীর্ঘ লড়াই এবং অনেক বাধা অতিক্রম করে সেই জাদুকরী কৌটোটি খুঁজে বের করে। তারা যখন সেই জাদুকরী ভ্রমরটিকে মেরে ফেলে, তখনই রাক্ষসটি প্রাণ হারায়। রাক্ষসের গুহায় তারা বহু ধনরত্ন এবং এক সুন্দরী রাজকন্যাকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পায়। তারা রাজকন্যাকে উদ্ধার করে এবং তাকে নিয়ে রাজ্যে ফিরে আসে।
রাজ্যে ফিরে আসার পর রাজা অত্যন্ত খুশি হন। দুই ভাইয়ের বীরত্বগাথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেষে নবকুমার এবং দুধকুমার সুখে-শান্তিতে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংস্কৃতির এই গল্পটি মূলত অশুভ শক্তির বিনাশ এবং ভ্রাতৃত্বের শক্তির জয়গান গায়। চন্দনাইশসহ চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে দাদি-নানিরা এখনো এই গল্প শুনিয়ে থাকেন।









